
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ‘মেয়রের দায়িত্ব’ দাবি করে নগর ভবন অবরুদ্ধ করে রাখা বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে যদি স্বেচ্ছায় সরানো না যায়, তাহলে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে নতুন নির্বাচনের দিকে এগোবে সরকার। এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’তে অনুষ্ঠিত সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উপস্থিত ছিলেন সরকারের নয়জন উপদেষ্টা। তারা জানান, নগর ভবনের কার্যক্রম বন্ধ করে রেখে ইশরাক যে অচলাবস্থা তৈরি করেছেন, তা নগরবাসীর ভোগান্তি বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অনেক উপদেষ্টা আইনানুগ পদক্ষেপের পরামর্শ দিলেও, বিএনপির সঙ্গে বর্তমান আস্থার সম্পর্কের কারণে তাৎক্ষণিক কড়াকড়ি না করার সিদ্ধান্ত হয়।
ইশরাক ২০২০ সালের দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে অংশ নেন এবং পরে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল থেকে নিজের পক্ষে রায় আদায় করেন। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগেও সেই রায় বহাল থাকলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত তাকে শপথ পড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। এর জের ধরেই গত মে মাস থেকে ইশরাকপন্থীরা নগর ভবন ঘেরাও করে রাখে এবং বিভিন্ন দপ্তরে তাকে ‘মাননীয় মেয়র’ সম্বোধনে সভা করেন।
গত ১ জুন মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও ইশরাক মেয়র হিসেবে অবস্থান বজায় রেখেছেন। এ অবস্থানকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল সরকারের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
সরকারের উপদেষ্টারা মনে করছেন, ইশরাকের চলমান অবস্থান রাজনৈতিকভাবে সহানুভূতির জন্ম দিতে পারে। তাই তাকে সরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহারে এখনই আগ্রহী নয় সরকার। বরং তিনি নিজে সরে না দাঁড়ালে দ্রুত নতুন নির্বাচন আয়োজনের দিকেই ঝুঁকবে সরকার।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এক বিবৃতিতে বলেন, সরকার সব জানে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি জানান, নাগরিক সেবা যেন পুরোপুরি বন্ধ না হয়, তা নিশ্চিত করতে বাইরে থেকে সেবা কার্যক্রম চালু রাখার চেষ্টা চলছে।
এদিকে স্থানীয় সরকার বিশ্লেষক অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, আইন অনুযায়ী ইশরাক এখন আর মেয়রের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান না। তবে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। তিনি ইশরাকের বর্তমান অবস্থানকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেন।
সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে—ইশরাক সরে না দাঁড়ালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নতুন নির্বাচন অনিবার্য হয়ে উঠবে।