
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভের পরে যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা, তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জাতির উপর নেমে আসে সংখ্যালঘু পশ্চিম পাকিস্তানীদের নিপিড়ন নির্যাতন। প্রথমই আঘাত হানা হয় মাতৃভাষার উপরে। বাংলাকে অগ্রায্য করে উর্দূকে মাতৃভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। বিভিন্নভাবে অপমান অপদস্ত করা হয় বাঙালি জাতিকে। বঞ্চিত করা হয় সকল রাষ্ট্রীয় সুবিধা থেকে। তখনই কেঁদে উঠে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মন। রাওয়ালপিন্ডিতে গোল টেবিল বৈঠকে তিনি উপস্থাপন করেন বাঙালির স্বাধিকারের কথা ছয় দফা। যা পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি গ্রহণ করেনি। উল্টো নিপিড়ন নির্যাতন শুরু করে বাঙালি জাতির উপর। ১৯৬৯ গণঅভ্যূত্থান শিক্ষা অধিকারের ১১ দফা গণ আন্দোলনে রূপ নেয়। বঙ্গবন্ধু দেখেন স্বাধীনতার স্বপ্ন। তারপরও তিনি ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। লাভ করেন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগোরিষ্ঠতা। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী নেতারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা না দিয়ে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে নিরহ ঘুমন্ত বাঙালির উপর অপারেশন সার্চলাইট নামক সামরিক হামলা চালায়। সার্চলাইট নামক সামরিক হামলা চালিয়ে হাজার হাজার ঘুমন্ত বাঙালিকে হত্যা করে। গর্জে ওঠে বাঙালির বাঘ, বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২৫ মার্চ রাত ১২ টার পর ঘোষণা করেন বাংলার স্বাধীনতা। দীর্ঘ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর নের্তৃত্বে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি জন্ম লাভ করে। বিশ্বের দরবারে পতপত করে উড়তে থাকে লাল সবুজের পতাকা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিকে সিমিত সম্পদ নিয়ে গড়ে তোলায় যখন ব্যস্ত রাষ্ট্র নায়ক শেখ মুজিবুর রহমান, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট কিছু বিপথগামি সৈনিক তাকে সপরিবারে হত্যা করে। বাংলাদেশ আবার পিছিয়ে যেতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দীর্ঘদিন পরে বাংলার রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে বাঙালি জাতিকে উন্নত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন।
পিছিয়ে পড়া বাঙালি জাতির ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন করেন। উৎসাহিত করেন নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার। বর্তমানে দেশের ৯০ ভাগ জনগোষ্ঠিকে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে। ১০০ ভাগ জনগোষ্ঠিকে নিরবিচ্ছন্নভাবে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ শেষের পথে। অচিরেই এ সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে। শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য এবং শিল্পকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় একটি করে এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (ইপিজেড) নির্মাণে পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম আনোয়ারায়, বাগেরহাটের মংলায়, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদি, সৈয়দপুর, শরীয়তপুর, চাঁদপুর অঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় ইপিজেড নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
পদ্মার দক্ষিণাঞ্চলে জনজীবনকে উন্নয়নের ছোঁয়া দেয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে পদ্মা বহুমূখী সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে যার ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতুর পূর্বাঞ্চলের নড়িয়া ও জাজিরায় প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সুরেশ্বর বাঁধ নড়িয়া নদী ভাঙন এলাকা সমূহ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। এ কাজটিতে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বিশেষ অবদান রয়েছে।
এছাড়া সাড়া দেশে নদী শাসনের কাজ চলমান। বুড়িগঙ্গা নদীর উপর দিয়ে তৈরি হয়েছে চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু। এছাড়া আড়িয়াল খাঁ নদীর উপর দিয়ে হাজি শরীয়তুল্লাহ সেতু ও আসমত আলী সেতু নির্মিত হয়েছে। খুলনায় রূপসা নদীর উপর দিয়ে রূপসা সেতু নির্মাণ করে দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে করা হয়েছে নিরবিচ্ছিন্ন। তৈরি হচ্ছে কুষ্টিয়া-ফরিদপুর মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক, মাওয়া-ভাঙা-খুলনা মহাসড়ক, ফরিদপুর ভাঙা রেল সড়ক, মোস্তফাপুর-চাঁদপুর মহাসড়কসহ হাজার হাজার কিলোমিটার মহাসড়কের কাজ চলমান রয়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম সড়কটানেল। যানজট নিরসনে রাজধানী ঢাকা শহরসহ বড় বড় শহরগুলোতে নির্মিত হয়েছে শত শত কিলোমিটার উড়াল সেতু। ঢাকায় মেট্রোরেলের কাজ সমাপ্তির পথে। রেল পথে মিটারগেজ, ব্রোডগেজ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণ ও চালু করা হয়েছে। কক্সবাজার কুতুবদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ চলছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তিসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের সুফল ভোগ করছেন দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণ। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ আকাশ অভিযানে অংশিদার হলো। টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটালেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানলগুলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমান সরকারের আমলেই দেশে থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট সেবা চালু হয়েছে। এখন প্রস্তুতি চলছে ফাইভ জি ইন্টারনেট সেবা ব্যবস্থা চালু করণের। আইসিটি ভিলেজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। ফলে ঘরে বসে মানুষ টাকা লেনদেন করতে পারছে। বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্ত বাংলাদেশ তখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার ধরে রখেছে।
এই সাফল্যকে বিলিন করার জন্য একটি কুচক্রি মহল ষড়যন্ত্র করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে ও দেশের উন্নয়নের চাকাকে থামিয়ে দেয়ার হীন উদ্দেশ্যে একটি কুচক্রি মহল আন্তর্জাতিক শত্রুদের সহযোগিতায় দেশে বিভিন্ন গুজব সৃষ্টি করে সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। কুচক্রি মহলরা পদ্মা সেতুর পাইলিং পিলার সম্পন্ন হওয়ার পরে গুজব সরিয়ে দেয় পদ্মা সেতুতে মানুষের মুন্ডু (মাথা) প্রয়োজন, যা গুজব ছাড়া কিছু নয়। যার ফলে দেশে কয়েকটি অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটে। প্রাণ হারায় নিরহ মানুষ। হয়রানির শিকার হয় সহজ সরল নারী পুরুষ। এরই মধ্যে তারা গত ১৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশি নাগরিক প্রিয়া সাহা অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদেরকে ‘গুম’ করা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশে নিরাপদ নন। এজন্য মুসলিম উগ্রবাদী আর রাজনৈতিক ছত্রছায়াকে দায়ী করে ট্রাম্পের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। যা আদৌ সত্য নয়। ব্যর্থ হয় আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের আরেকটি চক্রান্ত। ইতিপূর্বে আন্তর্জাতিক চক্রান্তে একটি গর্ভপাত ঘটে মায়ানমারে। নির্যাতিত রোহিঙ্গা সম্প্রদায় তাদের দেশ ছেড়ে ভির জমায় বাংলাদেশ সিমান্তে। মানবতার প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ইসলাম ধর্ম নির্দেশকে বুকে লালন করে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে বিশ্ব দরবারে দেন দরবার করে যাচ্ছে মানবতার দরদি বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এমন সময় মুনাফাখোর মহাজনদের কারসাজিতে উত্তপ্ত হয় পেঁয়াজের বাজার। পেঁয়াজের দাম উর্ধ্বমূখী হতে শুরু করে। যা বর্তমান সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। সরকার বহু চেষ্টা করেও এখনো নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি পেঁয়াজের বাজার দর। এরমধ্যে ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হয় লবনের বাজার দরে। দ্রুত সরকার ও প্রশাসনের পদক্ষেপ গ্রহনের কারনে লবন বাজারকে অস্থিতিশীল করা যায়নি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ বাঁধাগ্রস্থ করতে আন্তর্জাতিকভাবে শেখ হাসিনার ওপর, বাংলাদেশের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা সেই চাপ সামলে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন করে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন।
হাজার ষড়যন্ত্রের পরও বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, দাঁড়াবেই। সর্বপরি দাবী চক্রান্তকারী ও গুজব প্রচারকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।