Monday 12th May 2025
Monday 12th May 2025

বুড়িগঙ্গায় নৌকা ডুবে শরীয়তপু‌রের ছয় জন নিখোঁজ, বিয়ে বাড়িতে শোকের মাতম

বুড়িগঙ্গায় নৌকা ডুবে শরীয়তপু‌রের ছয় জন নিখোঁজ, বিয়ে বাড়িতে শোকের মাতম

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিন তারাবনিয়া ইউনিয়নের কিরণনগর জাফর আলী মালকান্দি গ্রামের কামাল চোকদারের মেয়ে খাদিজা আক্তারের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল শুক্রবার। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বোন জামসেদা বেগম, তার স্বামী দেলোয়ার হোসেন প্রধা‌নিয়া, সাত মাস বয়সি শিশু পুত্র জোনায়েদ ঢাকা থেকে শরীয়তপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সাথে ছিলেন চাচাতো ভাই শাহজালাল চোকদার, তার স্ত্রী শাহিদা বেগম, তাদের দুই সন্তান মিম ও মাহি। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বহনকারি নৌকাটি লঞ্চের ধাক্কায় বুড়িগঙ্গা নদীতে তলিয়ে যায়। আহত অবস্থায় শাহজালাল চোকদারকে উদ্ধার করা হলেও বাকি ছয়জন এখনো নিখোঁজ। লঞ্চের ধাক্কায় শাহজালালের দুইপা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাকে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবিতে ছয় জনের নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে তৎক্ষনাৎ ঘটনাস্থলে যান পানি সম্পদ উপমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম এমপি। এসময় তিনি উদ্ধার অভিযান পরিদর্শন করেন এবং নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন, শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

মাননীয় উপমন্ত্রী নিখোঁজদের খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন ।

শুক্রবার জামসেদার ছোট বোন খাদিজা বেগমের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল গ্রামের বাড়িতে। বিয়েতে যোগ দিতে জামসেদা ও তার চাচাতো ভাই শাহজালালের পরিবার এক সাথে ঢাকা থেকে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাতে নৌকা যোগে তারা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের দিকে যাচ্ছিলেন। রাত পৌনে ১০টার দিকে সদরঘাটে কাছাকাছি পৌঁছালে সুরভি-৭ নামের একটি লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাটি ডুবে যায়। শাহাজালালকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হলেও বাকিদের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে খাদিজার বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। বিয়ে বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। অনেক স্বজন তাদের সন্ধানে ঢাকায় বুড়িগঙ্গার তীরে ছুটে যান।

শুক্রবার দুপুরে বাড়ির উঠানে বসে বিলাপ করছিলেন জামসেদার মা ইয়ারুন নেছা ও বাবা কামাল চোকদার। তারা বারবার বলছিলেন, আমার মারে আর নানু ভাইরে আইন্না দে। অগো কইছিলাম রাইতের লঞ্চে আহিসনা। একদিন আগে দিনে আয়। আমার সব শেষ হইয়া গেল।

শাহজালাল চোকদারের বাবা মহসিন চোকদার বলেন, আমরা গরিব মানুষ। অভাবের সংসার হওয়ায় শিশি বয়সেই ছেলেকে কাজে ঢাকায় পাঠাই। সেখানে দর্জি কাজ শিখেছিল। ভালই আয় রোজগার করত। তার পাঠানো টাকায় আমরা চলতাম। বৌ আর নাতনি দুইটার খোজ পাচ্ছিনা। ছেলেটার দুইটা পা বিচ্ছিন্ন হইয়া গেছে। আল্লাহ কেন এত বড় বিপদ দিলা আমারে।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহম্মেদ বলেন, নৌ দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ছয় জন নিখোঁজ থাকার বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সরকারি সংস্থাগুলো নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান করছে। ওই পরিবারগুলোর পাশে উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষনিক থাকবে।

রাজধানীর সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা ডুবে একই পরিবারের ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ পরিবারটির মধ্যে ছয় মাস থেকে আট বছর বয়সী তিন শিশু রয়েছে। লঞ্চের পাখার আঘাতে ওই পরিবারের সদস্য শাহজালালের দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আজ শুক্রবার সকাল সোয়া নয়টা পর্যন্ত কাউকে উদ্ধারের তথ্য পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পোশাকশিল্প শ্রমিক শাহজালাল মিয়া (৩৮) তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে, চাচাতো বোন, বোন জামাই ও বোনের ছয় মাস বয়সী শিশুসন্তান নিয়ে কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ থেকে নৌকায় করে রওনা দিয়েছিলেন। সদরঘাটে কাছাকাছি পৌঁছালে সুরভি-৭ নামের একটি লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাটি ডুবে যায়।

এতে নিখোঁজ হন শাহজালালের স্ত্রী সাহিদা বেগম (৩২), দুই মেয়ে মিম (৮) ও মাহী (৬), শাহজালালের চাচা‌তো বোন জামসিদা বেগম (২০), বোন জামাই দেলোয়ার হোসেন (২৮) ও তাঁদের সাত মাস বয়সী সন্তান জুনায়েদ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার সময় লঞ্চের পেছনে থাকা পাখার আঘাতে শাহজালালের দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়। পাশেই থাকা নৌ পুলিশের একটি টহলদল শাহজালালকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। সেখান থেকে তাঁকে অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। নৌকার মাঝি সাঁতরে পাড়ে উঠতে সক্ষম হন।

সদরঘাট নৌ থানার উপপরিদর্শক শহিদুল ইসলাম জানান, রাত থেকে উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ কাউকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

শাহজালালের শ্বশুর আব্দুর রশিদ জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে আসেন। তাঁর জামাতা শাহজালাল কেরানীগঞ্জে পরিবার নিয়ে থাকতেন। সেখান থেকে তাঁরা গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের বজেশ্বরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। শাহজালাল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। মেয়ে–নাতনিসহ অন্যদের খোঁজে তিনি রাত থেকে অপেক্ষা করছেন। এখন পর্যন্ত কেউ উদ্ধার হয়নি। আব্দুর রশিদ আহাজারি করে বলছিলেন, ‘একজনের লাশও যদি পাইতাম, মনটায় শান্তি পাইতাম।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঢাকা জোন-৩–এর সহকারী পরিচালক মোস্তফা মহিউদ্দিন জানান, নৌকাটিতে সাতজন যাত্রী ও একজন মাঝি ছিলেন। সাতজনের মধ্যে একজনকে দুই পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি ছয় যাত্রী নিখোঁজ। তাঁরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। লঞ্চের পেছন দিকের সঙ্গে নৌকাটির ধাক্কা লাগে বলে তিনি জানান।

সদরঘাট নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। সেখান থেকে শাহজালালকে তারা উদ্ধার করে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে চেষ্টা করছেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি, নৌপুলিশ ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সদস্যরা।