
শরীয়তপুর আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৩ জুলাই। আর মাত্র তিনদিন বাকি। নির্বাচনকে সামনে রেখে জমে উঠেছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রার্থীরা পুরো দমে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। পোষ্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে শরীয়তপুর বাস টার্মিনাল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে। প্রার্থীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন।
নির্বাচন বোর্ড কর্তৃক নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা করা হয়েছে। গত ২৭ জুন ছিলো মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয় গত ২৮ জুন। আপত্তি-নিষ্পত্তি ছিলো ৩০ জুন। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিলো ১ জুলাই। প্রার্থীদের চুরান্ত তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ জুলাই এবং ভোটগ্রহণের দিন ধার্য করা হয় আগামী ১৩ জুলাই। নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে রয়েছেন শরীয়তপুর আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন তালুকদার। সহকারী কমিশনারের দায়িত্বে আছেন বাবু আশিস কান্তি পাল ও মো. ইদ্রিস মাদবর।
মোট ১২টি পদে ৩৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে তিনজন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সভাপতি পদে মোক্তার হোসেন প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়ায় ফারুক আহমেদ চৌকিদার পূরনায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া ক্রীড়া সম্পাদক পদে দুইজন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়ায় রিপন মাদবর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়া সহসভাপতি পদে ৭ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ২জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে ২ জন, কোষাধ্যক্ষ পদে ৩ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৩ জন, দপ্তর সম্পাদক পদে ৪ জন, প্রচার সম্পাদক পদে ৩ জন ও কার্যকরী সদস্য পদে ৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সহসভাপতি পদে প্রার্থীরা হলেন, মো. আক্তার হোসেন খান (কাপ পিরিচ), মো. আনিচ মোল্যা (মোমবাতি), সিরাজ খন্দকার (চশমা), দিপু মোল্যা (মাছ), ফারুক শিকদার (তালাচাবি), জালাল মাঝি (হাতুড়ি) ও দুলাল বেপারী (হারিকেন)। সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আলি আজ্জম মাদবর (ঘড়ি) ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. এলিম পাহাড় (বাঘ)। সহ সাধারণ সম্পাদক পদে আবুল কাশেম (বাস) ও সুমন তালুকদার (টায়ার)। কোষাধ্যক্ষ পদে আমিনুল ইসলাম (স্বপন) (মিনার), নুরুল ইসলাম মুন্সী (মটরসাইকেল) ও জব্বার মাদবর (বই)। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জলিল শেখ (আনারস), জসিম সরদার (আম) ও মোক্তার হোসেন খান (বাইসাইকেল)। দপ্তর সম্পাদক পদে মিজান শিকদার (মোরগ), সানি হাওলাদার (দোয়াত কলম), মাসুদ মৃধা (হাতি) ও শাহাদাত হোসেন খান (রেন্সি)। প্রচার সম্পাদক পদে টিটু শিকদার (মাইক), মান্নান বেপারী (মোবাইল) ও সোরহাব সরদার (রিক্সা)। কার্যকরী সদস্য পদে শাহিন ছৈয়াল (উড়োজাহাজ), সাজু বেপারী (পদ্মাফুল) আনোয়ার হোসেন বেপারী (খেজুর গাছ), সামছেল তালুকদার (হাস), দুলাল বেপারী (টিভি), বিল্লাল মৃধা (কলস) ও মোক্তার সরদার (ঘোড়া)।
একটানা সাত বার নির্বাচিত সভাপতি ফারুক আহমেদ চৌকিদার বলেন, আমি একটানা ৭ বার শরীয়তপুর আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের দায়িত্ব পালন করে আসছি। এর মধ্যে ৫ বার ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছি এবং ২ বার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছি। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে ২ বার নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। এবারের নির্বাচনের পরিবেশ অনেক সুন্দর। সবাই নির্বাচনমূখী। প্রার্থীরা যার যার মতো করে কাজ করছে যাতে তারা জয়লাভ করতে পারে। আমাকে শ্রমিক ভাইরা এবারও নিবাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত করেছেন, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। শ্রমিকদের প্রতি আমার ভালোবাসা সবসময় থাকবে। পাশাপাশি আমাদের যে সেবামূলক ব্যবসা জনসেবাটা যাতে তারা সুন্দর ভাবে করতে পারে তাদের প্রতি আমার সে নির্দেশ থাকবে এবং দূর্ঘটনার তার কমিয়ে এনে সুন্দরভাবে গাড়ি চালাবে এটাই আমার প্রত্যাশা।
বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আলি আজ্জম মাদবর বলেন, এবারও আমি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমি শতভাগ আশাবাদী শ্রমিক ভাইরা তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে পূনরায় আমাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করবে। আমি নির্বাচিত হতে পারলে বিগত দিনে শ্রমিক ভাইদের কল্যানে পাশে থেকে যেভাবে কাজ করেছি ভবিষ্যতেও শ্রমিক ভাইদের কল্যাণে কাজ করে যাবো। শ্রমিকদের দাবি আদায়ে লড়াই সংগ্রামে আমি সবসময় পাশে ছিলাম এবং আজীবন তাদের পাশে থাকবো।
শরীয়তপুর আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. এলিম পাহাড় বলেন, আমি শরীয়তপুর আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। এই নির্বাচনে আমার শ্রমিক ভাইরা আমার পক্ষে কাজ করতেছে। ৯৫ ভাগ শ্রমিক আমার পক্ষে আছে। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। কিন্তু কিছু লোক আমার লোকজনকে নির্বাচনী প্রচারে বাঁধা দিতেছে। তারা প্রকাশ্যে আমার শ্রমিক ভাইদের হুমকি ধমকি দিতেছে। আমি পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ করবো নির্বাচনের পরিবেশ যাতে সুন্দর শান্তিপূর্ণ থাকে তারা সে ব্যবস্থা করবেন। ভোটাররা যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে এটাই আমার দাবি। উশৃঙ্খলকারীরা যাতে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট না করতে পারে সেজন্য সকলের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, আগামী ১৩ তারিখের নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ন রয়েছে। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারি সে জন্য পুলিশ প্রশাসন ও শ্রমিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন। শান্তিপূর্ন পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।