Tuesday 3rd June 2025
Tuesday 3rd June 2025

বুড়িরহাটে জমে উঠেছে বর্ষার বাহন নৌকার হাট

বুড়িরহাটে জমে উঠেছে বর্ষার বাহন নৌকার হাট
বুড়িরহাটে জমে উঠেছে বর্ষার বাহন নৌকার হাট

সড়ক যোগাযোগের আধুনিকায়নে নৌযানের কদর কমলেও প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে যায়নি। তাইতো বর্ষার শুরুতেই নদী খাল বেষ্টিত শরীয়তপুর জেলায় জমে উঠেছে বর্ষার বাহন নৌকার হাট। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতি মঙ্গলবার নিয়মিত শরীয়তপুর জেলার সদর উপজেলার বুড়িরহাটে বসে নৌকার হাট।

প্রাচীণ ঐতিহ্যবাহী এ নৌকার হাটটি ২শ’ বছরের পুরানো বলে জানা যায়। ভেদরগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের কোশানৌকার কারিগর অরুন মন্ডল বলেন, আমাদের জেলার নদী ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় শরীয়তপুরবাসীর প্রিয় নৌযান কেরাই নৌকা হারিয়ে গেছে। তবে কৃষক বান্দব কোশানৌকার চাহিদা এখনো অপরিসীম। গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষই যাতায়াতের অন্যতম বাহন হিসেবে যুগ যুগ ধরে কোষা নৌকা ব্যবহার করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্ষা এলেই কোষা নৌকা তৈরির ধুম পড়ে যায়। তবে এবার নৌকার চাহিদা কিছুটা কম। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পূর্বেই জেলার পাটানিগাঁও, আটেরপাড়া, মাকসাহার, ঘোড়ারঘাট, পাপরাইল, চন্দনকর, মির্জাপুর, ছয়গাঁও, বিঝারী, ডুবিসায়বর, ডুবুলদিয়া ও ভোজেশ্বর গ্রামের (কারিগর) কাঠমিস্ত্রিরা কোষা বানানোর শুরু করে।

ছয়গাঁও গ্রামের কাঠমিস্ত্রি নারায়ন চন্দ্র দৈনিক রুদ্রবার্তাকে জানান, চৈত্র মাসের শুরু থেকেই কোষা তৈরি শুরু হয়। জারুল, হেগায়ারা, পউয়া, বাউড়িয়া ও আম কাঠের একেকটি কোষা তৈরি করতে সময় লাগে ২-৩ দিন। প্রতি মঙ্গলবার বুড়িরহাটে এ কোষাগুলো বিক্রি করা যায় ৬-৮ হাজার টাকায়।

ডামুড্যা উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের আব্দুল মজিদ মাদবর দৈনিক রুদ্রবার্তাকে জানান, প্রায় ২শ’ বছর ধরে নৌকার হাট বসছে সদর উপজেলার বুড়িরহাটে। এই হাটটিই জেলার সবচেয়ে বড় নৌকার হাট হিসেবেই পরিচিত। এখন এ হাটে তেমন বিক্রি না হলেও খালের পানি বেড়ে জমিতে উঠলেই কোষা নৌকার বিক্রি বেড়ে যাবে। জমে উঠবে এ হাটের বেচাকেনা।

স্থানীয় রোদোয়ন মুন্সি দৈনিক রুদ্রবার্তাকে জানান, পদ্মা, মেঘনা, কীর্তিনাশা ও জয়ন্তীয়া বিধৌত দেশের মধ্যঞ্চলিয় বিল খালে পুর্ণ জেলা শরীয়তপুর। মুগল আমল থেকে এ জেলার নৌকা নির্মাণের সুনাম রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এখনো এ জেলায় প্রচুর নৌকা তৈরি ও বেচা-বিক্রি হয়ে থাকে।

জেলার বুড়িরহাট ছারাও সুবচনি বাজার, নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর, ভেদরগঞ্জ উপজেলার বালারহাট ও গোসাইরহাটের দাশের জঙ্গলে বর্ষা মৌসুমে নৌকার হাট বসে। এতে কয়েক হাজার কোষা নৌকা বিক্রি হয়। স্থানীয় নুরু মুন্সি দৈনিক রুদ্রবার্তাকে বলেন, এক সময় ছিলো যখন জেলার বাইরে থেকে অনেকে বড় বড় ঘাসি নৌকা (পাল তোলা মালবাহী নৌকা) ভাড়া করে বুড়িরহাটে আসত কোষা কিনতে। তারা একেকটি ঘাসি নৌকার ভেতরে, ছাদে ও এর সঙ্গে বেঁধে বরিশালসহ দেশের অনেক এলাকায় কোষা কিনে নিয়ে যেত। বুড়িরহাটের সেই ঐতিহ্যে টান পরেছে। তবে এখনও হাটটি টিকে রয়েছে। কালের বিবর্তনে পাল তোলা মালবাহী নৌকা না আসলেও নছিমন-করিমন, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে এখনো দূর দূরান্তের ক্রেতারা এসে কোষা নৌকা কিনে নিয়ে যায়।