
আমাদের দেশে একটি প্রচলতি কথা রয়েছে, ‘বাজারে গিয়ে ঠকেছি’ ‘দোকানিরা ঠকে না’ হোটেলে পচা খাবার খেলাম ‘অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য কেনা’ এসব অনেক অভিযোগ মনের ভেতর লুকিয়ে আছে। বন্ধু বান্ধব প্রতিবেশির নিকট বলতেও লজ্জা পেতে হয়। আবার কথায় আছে ‘ঠকলে বাপের কছেও বলতে নেই’ এরকম হরেক রকমের কথা শোনা যায় সর্বত্রই। পূর্বের অভিজ্ঞতা নিয়েই আমরা চোখ বুজে আছি এবং তাই গ্রহন করছি। গতকাল বৃহস্পতিবার শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গিয়ে আমার চোখ খুলে গেছে।
ভালো ভাবে চোখ মেলেই দেখলাম আসলে বিষয়টি এখন সম্পূর্ন বিপরিত অবস্থা অপেক্ষা করছে। শুধু দরকার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া, পেছনের সব ক’টির কথার দিন পাল্টে গেছে। শরীয়তপুর জেলা প্রশানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোতাকাব্বির এর সভাপতিত্বে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ অধিকতর প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচনা সভা ও সেমিনারে জেলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের মূল্যবান বক্তব্যে গুরুত্বপূর্ন কথা শুনলাম। তার কথায় ওঠে এসেছে যে, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে যে আইন পাশ করেছে তাতে দেশের সকল পেশার মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন ও দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ার বিষয় স্পষ্ট। সভায় উপস্থিত ছিলেন শরীয়তপুরের সুদক্ষ সিভিলসার্জন ডাঃ মোঃ খলিলুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল-মামুন সিকদার সহ অনেকে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর শরীয়তপুরের সহকারী পরিচালক সুজন গাজী আইনটির বিষয় বস্তু পাঠ করেন। উপস্থাপনায় ছিলেন সহকারী কমিশনার মামুনুর রশিদ। আমি নিজে উপস্থিত থেকে জেলাবাসীর প্রতারনার বিবরন বিষয় তুলে ধরলাম। আমার মতো করে উপস্থিত অনেকেই বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরলেন। প্রধান অতিথি সুযোগ্য জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের মহোদয়ের বক্তব্যে আইনটির ব্যাখ্যাদিয়ে সকলকেই অবহিত করলেন। এতে স্পস্ট হওয়াগেল যে ক্রেতার অধিকারে কথা বা ভোক্তা অধিকারের কথা। ক্রেতারা প্রতারিত হলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। ক্রেতা, খদ্দের ও ভোক্তা এইক বুঝি। সাধারনত সকলের মাঝে বিষয়টি সহজ বা স্পট করাই মূল লক্ষ।
জীবনের নিরাপত্তা কিংবা কাজের নিরাপত্তার জন্য ভোক্তার অধিকার রয়েছে প্রতিশ্রতি পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে পাওয়ার। সে পণ্য বা সেবা সঠিক মানে, সঠিক মাপে পাওয়ার অধিকার তার রয়েছে। পণ্য বা সেবার নির্ধারিত মূল্য বা বিনিময়ে সে পণ্য বা সেবা পাওয়া ভোক্তার অধিকার। তাই পণ্যের উপাদান, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, বিক্রয়মূল্য, কার্যকারিতা জানার অধিকারও তার রয়েছে। এর যেকোনোটির ব্যত্যয় ঘটলে সে পণ্য বা সেবাদানকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার অধিকার তিনি সহজাতভাবেই ভোগ করবেন। সর্বোপরি কোনো পণ্য বা সেবা ব্যবহারের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার ক্ষতিপূরণ পাওয়াও ভোক্তার একান্ত অধিকার।
আমরা সবাই কোনো না কোনো পণ্য বা সেবার ভোক্তা বা গ্রহীতা। ভোক্তার অধিকার রক্ষায় সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন করেছে ২০০৯ সালে। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোনো পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রয় করা এমনকি বিক্রয়ের প্রস্তাব করা অপরাধ। জেনেশুনে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন ভেজাল মিশ্রিত অথবা নকল পণ্য, সেবা অথবা ঔষধ বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করা একটা বড় অপরাধ। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বা ঔষধ জীবনের জন্য কত ক্ষতিকর তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই বলতে পারবেন। এসিড বিক্রেতা মনের হরষে এসিড বিক্রি করছে আইনের তোয়াক্কা না করে। কিন্তু যদি এমন হয়-কখনও নিজের বাসা থেকে টেলিফোন আসে কোনো এক সন্ত্রাসী তার মেয়েকেই এসিড মেরেছে এবং একটু পরে যখন আরও বুঝতে পারে যে সেই সন্ত্রাসী তার দোকান থেকেই এসিড কিনেছিল তখন সে হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে যে সে কী ভুল করেছিল।
ওজনে কারচুপি, ওজন যন্ত্রে কারচুপি, পরিমাপে বা পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপির বচসা আমরা প্রায়ই হাট-বাজারে দেখে থাকি। কিন্তু কারচুপিকারী ব্যবসায়ীরা যখন ভোক্তা হিসেবে অন্য কোনো পণ্য কিনতে গিয়ে এ কারচুপির শিকার হয় তখন বেচারার খুব মন খারাপ হয়। আবার মন খারাপ না ও হতে পারে যদি সে উপলব্ধি করে যে সেও তো ওজনে কারচুপি করে। কিন্তু আম-জনতার মন খারাপ হবেই। আর এ কারচুপির কারণে আজ সৎ ব্যবসায়ীদের অবস্থা সংকটাপন্ন। তারা এসব কারচুপিকারীদের সাথে মূল্য প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছেনা। পণ্যের গায়ে পণ্যের উপাদান, বিক্রয় মূল্য, মেয়াদ উত্তীর্ণে তারিখ, পণ্যের কার্যকারিতা ইত্যাদি না লিখে পণ্য উৎপাদকরা ভোক্তাকে ঠকাচ্ছে প্রতিনিয়ত যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রতিশ্রুতি পণ্য বা সেবা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সঠিকভাবে না দেয়া ভোক্তার অধিকার ক্ষুণেœর আরেকটি অপরাধ। আজকাল প্রায়ই দেখা যায় প্রতিশ্রুতি সেবা প্রদানে অবহেল, দায়িত্বহীনতা বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সঠিক সেবা না দেয়ার কারণে প্রায়ই জীবনহানি ঘটছে। জীবনহানির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা প্রতিক্রিয়া দেখালে বা সুবিচার চাইলে এসব অসাধু সেবাদাতারা সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করছে বা সামগ্রিকভাবে অন্য সেবা গ্রহীতাদের সেবাদানে বয়কট করছে। এটা আইন মান্য না করা এবং সামগ্রিকভাবে আমাদের জাতীয় হীনতা, নিচতার বহিঃপ্রকাশ বৈকি। যে অপরাধের জন্য তার লজ্জা পাওয়া উচিত ছিল, ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল, তা না করে সে উদ্ধতপনা করছে, আস্ফালন করছে, হুমকি দিচ্ছে, ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন ধরনের শক্তির ছত্রচ্ছায়ায় সে দ্বিগুণ হারে অপরাধ করছে। এ সবই আইনত দ-নীয় অপরাধ।
এক তথ্য মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে পাঁচ কোটি লোক খাদ্য বিষক্রিয়ায় ভুগছে। রাজধানী ঢাকার ষাট ভাগ সবজিতেই বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মিশানো থাকে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ৭৬টি খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে যার চার ভাগের তিন ভাগ নমুনায় ভেজাল পায়।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে অ্যালোপ্যাথিক ঔষধ কোম্পানি ২৪৬টি, আয়ুর্বেদিক কোম্পানি ২২৪টি, ইউনানি কোম্পানি ২৯৫টি, হোমিওপ্যাথিক প্রতিষ্ঠান ৭৭টি সহ মোট ৮৪২টি ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট তৈরি করছে ১০৬টি প্রতিষ্ঠান। ৪০ থেকে ৫০টি ব্যতীত বাকি কোম্পানিগুলো নকল, ভেজাল ও ন্নিমানের ঔষধ তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখেছেন নকল ও ভেজাল ঔষধের অনেকগুলোর মধ্যে কোনো কেমিকেল উপাদান নেই। ময়দা দিয়ে তৈরি করা হয় এসব ঔষধ।
এসব অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, কারচুপি, মানহীনতা প্রতিরোধে একাধিক আইন রয়েছে। সর্বশেষ সরকার ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন করেছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর অধীন অভিযোগ দায়ের এবং অপরাধ ও দন্ডের বিধান:
ভোক্তার খুঁটিনাটি অধিকার সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রণীত আইনটির নাম ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯’। এই আইনের অধীনে ভোক্তারা সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের জন্য অধিদপ্তর বরাবর অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। অভিযোগ করার সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আইনে বলা আছে। প্রথমত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত আকারে অভিযোগ পেশ করতে হবে। আইনটির ধারা ২-এর ২০ উপধারায় ভোক্তা অধিকারবিরোধী ১২টি কাজের তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে। আইনের চতুর্থ অধ্যায়টি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই অধ্যায়ে ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনে অপরাধ এবং তার দ- সন্নিবেশিত হয়েছে। পঞ্চম এবং ষষ্ঠ অধ্যায়ে যথাক্রমে বিচার প্রক্রিয়া এবং আদালতের এখতিয়ার ইত্যাদি বিষয় বর্ণিত হয়েছে।
কে অভিযোগ করতে পারেন? আইন অনুসারে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন কোনো ভোক্তা, একই স্বার্থসংশ্লিষ্ট এক বা একাধিক ভোক্তা, কোনো আইনের অধীনে নিবন্ধিত কোনো ভোক্তা সংস্থা, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বা এর পক্ষে অভিযোগ দায়েরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা, সরকার বা এই উদ্দেশ্যে, সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো সরকারি কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী।
উল্লেখ্য, ভোক্তা স্বার্থ ক্ষুন্ন হলে তবেই অভিযোগ আনা যাবে।
অভিযোগ দায়ের করণ অভিযোগ দায়ের করার সময় অধিদপ্তরে বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হবে। যেমন, লিখিত অভিযোগপত্র, সঙ্গে থাকবে ক্ষতির প্রমাণপত্র অর্থাৎ পণ্যের মোড়ক, ক্যাশ মেমো বা উপযুক্ত যে কোনো প্রমাণ। অভিযোগপত্রে অভিযোগকারীর নাম, পূর্ণ ঠিকানা ইত্যাদি লিখতে হবে। অভিযোগপত্র ফ্যাক্স, ডাক কিংবা ই-মেইলেও দেয়া যাবে।
ভোক্তা-অধিকারবিরোধী কাজ ১. কোনো আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে কেনা পণ্য, ওষুধ বা সেবা বিক্রি করা বা করার প্রস্তাব দেয়া, ২. জ্ঞাতসারে ভেজালমিশ্রিত পণ্য বা ওষুধ বিক্রি করা বা করতে প্রস্তাব করা, ৩. জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকারক কোনো দ্রব্য, কোনো খাদ্যপণ্যের সঙ্গে মেশানো, যার মিশ্রণ কোনো আইন বা বিধির অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এভাবে নিষিদ্ধ দ্রব্য মিশ্রিত কোনো পণ্য বিক্রি করা বা বিক্রির প্রস্তাব করা; ৪. কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রির উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করা; ৫ প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রি বা সরবরাহ না করা; ৬. কোনো পণ্য সরবরাহ বা বিক্রির সময় ভোক্তাকে প্রতিশ্রুত ওজনের চেয়ে কম ওজনের পণ্য বিক্রি বা সরবরাহ করা; ৭. কোনো পণ্য বিক্রি বা সরবরাহের উদ্দেশ্যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ওজনপরিমাপের কাজে ব্যবহৃত বাটখারা বা ওজনপরিমাপক যন্ত্র প্রকৃত ওজনের চেয়ে অতিরিক্ত ওজন প্রদর্শনকারী হওয়া; ৮. কোনো পণ্য বিক্রি বা সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুত পরিমাপের চেয়ে কম পরিমাপের পণ্য বিক্রি বা সরবরাহ করা;
৯. কোনো পণ্য বিক্রি বা সরবরাহের উদ্দেশ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দৈর্ঘ্য পরিমাপের কাজে ব্যবহৃত পরিমাপক ফিতা বা অন্য কিছু প্রকৃত দৈর্ঘ্যের চেয়ে বেশি দৈর্ঘ্য প্রদর্শনকারী হওয়া; ১০. কোনো নকল পণ্য বা ওষুধ প্রস্তুত বা উৎপাদন করা; ১১. মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ বিক্রয় করা বা করতে প্রস্তাব করা; ১২. সেবাগ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো কাজ করা, যা কোনো আইন বা বিধির অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলেই প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ দাখিল করা যাবে।
ভোক্তা অধিকার আইনের সীমাবদ্ধতা আইন প্রয়োগের ফলে ভোক্তা অধিকারের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আইনটি প্রণয়নের ফলে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও ভোক্তা তথা জনগণ এর সুফল পেতে শুরু করেছে। আইনের কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এটি যথেষ্ট কার্যকর একটি আইন। ৬০ ধারা অনুযায়ী কেবল ক্ষমতাপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারাই এ আইনের আওতায় মামলা করতে পারবেন। একজন সাধারণ ভোক্তা সরাসরি অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন না। তাকে আইনানুযায়ী প্রতিষ্ঠিত ডিজি বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দপ্তরে আগে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। আরেকটি সীমাবদ্ধতা হলো, অভিযোগ দায়েরের ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করা না হলে অভিযোগ আমলে নেয়া হয় না। পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্প সময়ে প্রতিকার পাওয়া গেলে তা ভোক্তার জন্য মঙ্গলজনক হতো। অভিযোগ যাচাই-বাছাই কালে অনেক সময় বিক্রেতা কর্তৃক অযাচিত প্রভাব আসার আশঙ্কা থাকে। আবার যেহেতু অভিযোগকারীর নাম, ঠিকানাসহ অভিযোগের একটি কপি বিক্রেতাকে দেয়া হয়, এতে অভিযোগকারীর নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। সুতরাং, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা এবং সময়ক্ষেপণ হ্রাস সহ এই দুটি বিষয়ে পদক্ষেপ গৃহীত হলে আইনটি আরো জনকল্যাণকর হবে।
বাংলাদেশে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ আইনের আওতায় গঠিত হয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আইনের আওতায় সারাদেশে ভোক্তাদের অধিকার সুরক্ষায় জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠিত হওয়ার কথা। এই আইনে সংঘটিত অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব এক থেকে তিন বছর কারাদন্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। আইনে উল্লেখিত কোনো অপরাধের জন্য দন্ডিত ব্যক্তি যদি আবার একই অপরাধ করেন তবে তিনি ওই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ যে দন্ড দেয়া হয়েছে তার দ্বিগুণ দন্ডে দন্ডিত হবেন। বলাই বাহুল্য যে, আইন থাকলেও ভোক্তারা আজো তাদের অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ। অথবা জানলেও কোনো লাভ নেই। এজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকসেবা ও অধিকার সংরক্ষণে এবং সেবাগুলোর অব্যবস্থাপনা নিরসন ও ভোক্তাদের কার্যকর সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। ভোক্তা হিসেবে নিজেদের অধিকার সমুন্নত রাখতে জানতে হবে ভোক্তা আইন এবং প্রয়োজনে অভিযোগ জানাতে হবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। এই ক্রেতা-ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করা না গেলে তৃণমূল পর্যায় থেকেই মানবাধিকার সুরক্ষার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। কারণ ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘিত হলে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার মান ধরে রাখা কঠিন হবে।
এসকল কাজ সব জেলা উপজেলা প্রশাসন নির্বাহী ম্যাজিেেষ্ট্রট ও জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর।
লেখক: শহীদুল ইসলাম পাইলট, সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক রুদ্রবার্তা, শরীয়তপুর। কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ), ঢাকা।