Tuesday 13th May 2025
Tuesday 13th May 2025

‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের অনন্য ভূমিকাকে সাধুবাদ জানাই’

‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের অনন্য ভূমিকাকে সাধুবাদ জানাই’

জ্ঞান-বিজ্ঞান সভ্যতা, আধুনিকতা প্রযুক্তি সংযুক্ত আজকের পৃথিবীতে যেখানে বাল্যবিবাহের কথা ভাবাই যায় না সেখানে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার ভয়াবহ উদ্বেগজনক। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের হার যা সারা বিশ্বের মধ্যে বিশেষ স্থানে রয়েছে। বাল্যবিবাহের এ হেন অবস্থায় আমাদের সকল অর্জন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। বাল্য বিবাহ নামীয় পাগলা ঘোড়া কিছুতেই থামছে না। যত কিছুই বলা হোক, যত কিছুই করা হোক বাল্যবিবাহ আপন গতিতে চলছে। ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ক্ষেত্রেই বাল্যবিবাহ বিদ্যমান। বাল্যবিবাহের খারাপ দিক কেউ বোঝেনা এমন নয় সকলে সবকিছু জেনে বুঝেই বাল্যবিবাহের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। দেশে যে হারে বাল্যবিবাহ সংঘঠিত হচ্ছে এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা পিছিয়ে পড়া জাতি হিসেবেই চিহ্নিত হবো। এটা কারো জন্যই সুখকর নয়। এর একটা বিহীত প্রয়োজন। এখনই বাল্যবিবাহকে প্রতিরোধ করতে হবে। তা করতে না পারলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ব্যর্থতার গ্লানীতে পতিত হবে। এ ব্যর্থতার দায় রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের উপর বর্তাবে। কেউ দায় এড়িয়ে যেতে পারবে না, যাবার সুযোগ নেই। তাই যার যার অবস্থান থেকে বাল্যবিবাহ বিরোধী যথার্থ ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে যথার্থ ভূমিকা পালন করতে পারলে এ মারাত্মক সামাজিক ব্যাধী নিরোধ করা সহজ হবে। আমাদের সকলের বাল্যবিবাহ বিরোধী হতে হবে, বাল্য বিবাহকে না বলতে হবে, একে চরমভাবে ঘৃণা করতে হবে এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জলে-স্থলে প্রতিহত করতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে। ব্র্রিটিশ তাড়িয়েছি, সম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছি, উপনিবেশবাদ ভেঙ্গে দিয়েছি। বাহান্নতে ভাষা আন্দোলন করেছি, উনসত্তরে গণঅভ্যূত্থ্যান করেছি, একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি। আমরা স্বৈরাচার বিতারিত করেছি। আমরা আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির পথে এগিয়ে চলছি। সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চলছি। এমতাবস্থায় বাল্যবিবাহ রিপু আমাদের অগ্রযাত্রা পিছিয়ে দিতে পারবে না। এ রিপু তাড়াতে দরকার উদ্যোগ। সাহস নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে একযোগে এগিয়ে গেলে দেশকে বাল্যবিবাহমুক্ত করা কঠিন হবে না, খুব বেশী সময়ও লাগবে না।
বাল্যবিবাহ নিরোধে শরীয়তপুর জেলার মাননীয় জেলা প্রশাসক যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা অনুকরণ-অনুস্মরণ করতে পারলে দেশে বাল্য বিবাহ বলতে কোন শব্দ থাকবে না। আমাদের দেশে ৬৪ টি জেলা রয়েছে। ৬৪ টি জেলায় ৬৪ জন জেলা প্রশাসক দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। প্রশাসন ক্যাডারে জেলা প্রশাসক পদটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও সীমাহীন লোভনীয় পদ। এ পদ সবার ভাগ্যে জোটে না। আমার পরিচিত অনেক উর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা রয়েছে যারা জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন নাই। তাই তাদের মাঝে আফসোস দেখেছি। একটা অপূর্ণতা তাদের মাঝে লক্ষ্য করেছি। জেলা প্রশাসক একটি জেলার কর্তাব্যক্তি। তার তদারকী, দিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে জেলার সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে থাকে। তিনি ইচ্ছা করলে বৈধ সকল কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করতে পারেন জেলা ও জেলায় বসবাসরত নাগরিকদের স্বার্থে। জেলার প্রধান কর্তাব্যক্তি হিসেবে তাকে সবাই অনুকরণ-অনুস্মরণ করে থাকেন। সুতরাং ৬৪ টি জেলার ৬৪ জন জেলা প্রশাসক যদি শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের স্যারের মত করে বাল্য বিবাহ নিরোধে ভূমিকা পালন করে যান তা হলে বাংলাদেশ থেকে বাল্যবিবাহের পাগলা ঘোড়া অচিরেই পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে।
শরীয়তপুর জেলার জন্য সম্মানিত জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের কে পেয়ে আমি ও আমরা গর্বিত। সুযোগ্য না বলে পারছি না। সম্মানিত সুযোগ্য জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের আগা-গোড়া বাল্যবিবাহ বিরোধী। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে তার অনন্য ভূমিকা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অতি সম্প্রতি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সুযোগ্য নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় শম্পা নামের ৫ম শ্রেণির ১১ বছর বয়স্ক ফুটফুটে ছোট্ট মেয়েটি বাল্যবিবাহের কড়াল গ্রাস থেকে রক্ষা পেয়ে নব জীবন লাভ করেছে। শম্পার বর ১২ বছর বয়স্ক দোকান কর্মচারী মোতালেবও বাল্য বিবাহের স্বীকার হতে যাচ্ছিল। বর ও কণে দু’জনই এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছেন। যদি জেলা প্রশাসক মহোদয় উক্ত বাল্যবিবাহের সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জরুরী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করতো তা হলে শম্পা ও মোতালেবকে হয়তোবা বাল্য বিবাহের রিপু কুড়ে কুড়ে খেত। শুধু শম্পা আর মোতালেব নয় সম্মানীত জেলা প্রশাসক মহোদয় সকল বাল্যবিবাহের ব্যাপারেই সোচ্চার। বাল্যবিবাহ প্রসঙ্গে তিনি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। যেখানেই তিনি অবস্থান করেন বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সেখানেই কথা বলেন, দিক নির্দেশনা প্রদান করেন, খোঁজ-খবর নেন। জেলা প্রশাসক পদটি গুরুত্বপূর্ণ ও লোভনীয় হলেও তা অতি স্পর্শকাতর ও ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-উৎসব, আচার-অনুষ্ঠান, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা, আইন শৃংখলা উন্নয়ন-অগ্রগতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ব্যস্ত জীবন অতিবাহিত করে থাকেন জেলা প্রশাসকগণ। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের মহোদয়ও এর ব্যতিক্রম নন। সীমাহীন ব্যস্ততার মাঝেও তিনি দৈনিক রুদ্রবার্তা পত্রিকায় বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত উপ-সম্পাদকীয় লিখেছেন যা প্রশংসার দাবীদার। রুটিন ওয়ার্কের বাইরে তার সৃজনশীল সমাজ সংস্কার চিন্তা-চেতনা সমৃদ্ধ লেখা শরীয়তপুরবাসীর হৃদয়ে দোলা দিয়ে যাচ্ছে। তথ্য বহুল, মার্জিত, ভাব-ভাষায় অনিন্দ নান্দনিক বিষয়াবলীর অবতারণা খুঁজে পাওয়া যায় কাজী আবু তাহের মহোদয়ের লেখনীতে। তিনি তার লেখায় বাল্য বিবাহের প্রতিকার সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। শত ব্যস্ততার মাঝে একজন জেলা প্রশাসক হয়ে পত্রিকার পাতায় কলাম লিখে তিনি বাল্য বিবাহ সম্পর্কে তার মতামত, দিয়ে আশা জাগানিয়া চেতনার বহ্নিশীখা জ্বেলে দিলেন। সে চেতনা দীপ্ত পথে শরীয়তপুর একযোগে যদি হাটে তা হলে বাল্যবিবাহের বারোটা বাজতে সময় লাগবে না।
কাজী আবু তাহের মহোদয় জেলা প্রশাসক হিসেবে শরীয়তপুরে যোগদান করেই শরীয়তপুর থেকে বাল্যবিবাহের ভুত তাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি তার সকল বক্তৃতা, বিবৃতিতে কোন না কোন ভাবে বাল্য বিবাহ বিরোধী কথা বলতে ভূল করেন না। বাল্যবিবাহ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন থাকতে পরামর্শ প্রদান করেন। তার অধিনস্তদের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন বাল্যবিবাহ নিরোধ কল্পে। আমার মনে হয় কাজী আবু তাহের মহোদয়ের নেতৃত্বে আমরা অচিরেই শরীয়তপুর থেকে বাল্যবিবাহের ভূত তাড়াতে সক্ষম হবো। তিনি যে ভাবে কাজ শুরু করেছেন এর ধারাবাহিকতা নষ্ট তো হবেই না বরং দিনে দিনে তা আরো সংঘবদ্ধ হবে, আরো তরান্বিত হবে। আর তাই যদি হয় তা হলে শরীয়তপুর হবে বাল্য বিবাহ মুক্ত জেলা। এর কান্ডারী হবে সম্মানীত জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের মহোদয়। বাল্যবিবাহ নিরোধে তার মনোভাব সুদৃঢ়। কঠোর ও কঠিনভাবে তিনি বাল্যবিবাহ সংশ্লিষ্টদের দমনে বদ্ধ পরিকর। তার সময়ে শরীয়তপুরে বাল্য বিবাহ করে, বাল্যবিবাহে উৎসাহিত করে, বাল্য বিবাহ করতে সহযোগিতা করে এমন কেউই ছাড় পাবে না বলেই আমার বিশ্বাস। কেউ যদি ছাড় পায় তা হলে কাঙ্খিত সফলতা আসবে না। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নেতৃত্বে সমন্বিতভাবে কাজ করে আমরা যদি শরীয়তপুর জেলাকে খুব কম সময়ের মধ্যে বাল্যবিবাহ মুক্ত করতে পারি তা হলে এটা হবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের রোল মডেল। এ মডেল সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে তা অনুকরণ করে দেশ থেকে চিরতরে বাল্যবিবাহ বিদায় নিবে। দেশ থেকে বাল্যবিবাহকে বিদায় দেয়াও আমাদের উচিৎ। বাল্যবিবাহ সমাজের বিষফোঁড়া। এর কারণে আমাদের উন্নয়ন অগ্রগতি ম্লান হতে পারে না। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা, প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে আধুনিক উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা দারিদ্র মুক্ত আধুনিক সোনার বাংলা গড়ার। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন অগ্রগতির মহাসড়কে দেশকে নিয়ে গেছেন। তার নেতৃত্বে আমরা স্বল্প উন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হতে চলছি। এ অবস্থায় বাল্যবিবাহের মত সামাজিক ব্যাধী আমাদের মাঝে বিরাজ করবে তা হয় না। বাল্য বিবাহকে মেনে নেয়া যায় না। মানবিক মূল্যবোধ বিবর্জিত বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। সমাজ থেকে বাল্যবিবাহের মূল উৎপাটন না করলে সামাজিক কুসংস্কার থেকেই যাবে। অন্ধকারাচ্ছন্ন কুসংস্কারে পতিত হয়ে আধুনিক উন্নত বাংলাদেশ গড়া যাবে না। দেশের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে মানুষের স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে, বাল্যবিবাহ মুক্ত হতে হবে। বাল্য বিবাহের কারণে সুস্থ্য সমাজ গঠন করা যাচ্ছে না। ত্রুটিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণের মাধ্যমে উন্নয়ন অগ্রগতির মহা সোপানে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়। নির্ভেজাল সমাজ গঠন করে মানবিক মূল্যবোধ ধারণ ও গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে। এর বিকল্প হতে পারবে না। এর বিকল্প খোঁজা মানে পিছিয়ে পড়া। বর্তমান যে গতিতে দেশের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরছে, গতিতে উন্নয়ন অগ্রগতির চাকা ঘুরছে এ ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের সচেতন হতে হবে, সচেতন থাকতে হবে। যেন কোন ভুলের জন্য আমাদের পিছিয়ে পড়তে না হয়। কোন কারণে একবার পিছিয়ে পড়লে সেখান থেকে উত্তরণের উপায় উদ্ভাবন করে মূলধারায় ফিরে আসতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে। তাই সময় থাকতেই সচেতন হতে হবে, সাবধান হতে হবে। বাল্যবিবাহ শুধু সামাজিক সমস্যাই না উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য এটা একটা অন্তরায়। আধুনিকতার এটা প্রধান বাঁধা। এ বাঁধা, এ অন্তরায় দূর করতে শরীয়তপুরে জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের যে ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তা অব্যাহত থাকলে বাল্যবিবাহ শব্দটি বাংলা অভিধান থেকে হারিয়ে যাবে। সুতরাং জেলা প্রশাসক মহোদয়ের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তা বাস্তবায়নে তাকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান এখন আমাদের দায়িত্ব কর্তব্যের মধ্যে এসে পড়েছে। এ দায়িত্ব কর্তব্য পালনে শরীয়তপুর জেলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষদের এগিয়ে আসা দরকার। শুধু দরকারই না তাদের এগিয়ে আসা এখন মূখ্য কাজ। কারণ শরীয়তপুর জেলায় প্রচুর বাল্যবিবাহ সংঘটিত হয়ে আসছে। জেলাটি বাল্যবিবাহ প্রবণ। নদী বেষ্ঠিত, যোগাযোগ সমস্যাগ্রস্থ, বন্যা, নদী ভাঙ্গন প্রবল শরীয়তপুরের আনাচে-কানাচে প্রতিদিনই বাল্যবিবাহ হচ্ছে। জেলার চরাঞ্চলে বাল্য বিবাহকে অপরাধ মনে না করে তা লালন-পালন ও চর্চা করছে। বাল্য বিবাহ শুধু চরাঞ্চলে হচ্ছে এমনটি নয়। জেলা সর্বত্র বাল্যবিবাহ বিরাজমান। চরাঞ্চলে এর মাত্রা বেশী। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সংকট বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও উন্নয়ন অগ্রগতির ঢেউ শরীয়তপুরে তেমন করে লাগেনি। জেলায় কোন কল-কারখানা গড়ে উঠেনি। কৃষি ও মৎস্য পেশায় জড়িত জেলার সিংহ ভাগ মানুষ। ইদানিং বৈদেশিক কর্মসংস্থানের দিকে ঝুকছে এখানকার উঠতি যুবকগণ। গত কয়েক বছরে জেলার বিপুল পরিমাণ লোক বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। অদক্ষ্য এসব লোকজনের ঠিকানা এখন দক্ষিণ এশিয়া ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের ইতালী, স্পেন, গ্রীস, দক্ষিণ আফ্রিকা। উল্লেখিত দেশগুলো শরীয়তপুরের বিপুল সংখ্যক লোক অবস্থান করছে। যার কারণে জেলার প্রচুর পরিমাণ রেমিটেন্স আসছে। বৈদেশিক রেমিটেন্স অর্জনে শরীয়তপুরের অবস্থান এখন সারা দেশের মধ্যে তৃতীয়। জেলার তেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকলেও এখানকার লোকজন বিদেশে কর্মস্থান তৈরী করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। এ কারণে শরীয়তপুর শিক্ষার হার বাড়ছে না। লেখাপড়া শেষ না করেই সবাই উচ্চাকাঙ্খার ফাঁদে পড়ে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। এতে তারা সফলতাও অর্জন করেছেন। এসব প্রবাসীরা দেশে ফিরে রিয়াল, রিংগিট, দিনার, রূপি, ডলার, ইউরো ইত্যাদি মুদ্রা নিয়ে। এসব কাঁচা মুদ্রার গন্ধে বাল্য বিবাহের মত অভিশাপ ডেকে আনতে দ্বিধা করছেন না মেয়ে পক্ষ। পাত্র বিদেশ থেকে এসেছে বা বিদেশে আছে শুনলেই যে কোন বয়সের পাত্রের সঙ্গে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে বিয়ে দিতে রাজী হয়ে যাচ্ছেন মেয়ে পক্ষ। আর প্রবাসীদের প্রথম ও প্রধান পছন্দ বাল্য পাত্রী অর্থাৎ অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাত্রী। এ কারণেই শরীয়তপুর জেলায় বাল্যবিবাহের মাত্রা উদ্বেগজনক। অন্যদিকে অশিক্ষা, দারিদ্রতা, কুসংস্কার ইত্যাদির কারণে মানুষ বাল্যবিবাহের গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না।
তবে বাল্য বিবাহের কবল থেকে শরীয়তপুরকে বের করে এনে বাল্যবিবাহমুক্ত জেলা ঘোষণা করা খুব একটা কঠিন কাজ বলে আমি মনে করি না। বর্তমান জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের মহোদয় যে ভাবে কাজ শুরু করছেন এর সঙ্গে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করলেই সফলতার মুখ দেখতে পারবো। জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বলছি, আপনি এগিয়ে যান। আমরা জেলাবাসী আপনার সঙ্গে আছি এবং থাকবো। আপনি জেলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে একত্রিত করে তাদের মাধ্যমে সকলের নিকট বার্তা পৌঁছে দিতে পারেন যে, বাল্য বিবাহ চলবে না। যেখানে বাল্য বিবাহ সেখানেই প্রতিবাদ সেখানেই প্রতিরোধ এ নীতি অবলম্বন করতে পারেন। আপনার অধিনস্থদের নির্দেশ প্রদান করতে পারেন বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে। গোটা জেলাকে একই ফ্রেমে গেথে সমভাবে কাজ করতে পারলে এ ভয়াবহ ব্যাধী মুক্ত হতে তেমন সময় লাগবে না। মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয় আপনার উদ্যোগ কে আমরা স্বাগত জানাই। সাধুবাদ জানাই। আপনার বাল্যবিবাহ নিরোধ কার্যক্রমের সঙ্গে দৈনিক রুদ্রবার্তা পত্রিকা আছে এবং থাকবে। বাল্য বিবাহ বিরোধী সকল প্রচারণা, প্রকাশে দৈনিক রুদ্রবার্তা আঙ্গীকারবদ্ধ।
লেখক: শহীদুল ইসলাম পাইলট, সাংবাদিক ও কলাম লেখক।