
আর কত নির্যাতন হলে দেশে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ হবে। জাতির কাছে এ প্রশ্ন বিএমএসএফ’র। দেশে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের সুরক্ষায় সরকার আইন করে থাকেন। কিন্তু রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ খ্যাত সাংবাদিকরা আর কত নির্যাতিত হলে সাংবাদিক সুরক্ষায় সরকার আইন প্রণয়ন করবেন। সাংবাদিক নির্যাতন-হয়রাণী, হত্যা আজকাল খুব সহজ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন পাবলিক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে খুব সহজে এবং সস্তায় করা সম্ভব। পক্ষান্তরে কোন সাংবাদিক কারো বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে কাঠখড়ি পোড়াতে হয়। এমনও দেখা গেছে জনৈক ব্যক্তি এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করবেন আর ওই মামলার কপি কম্পিউটারের দোকোনে কম্পোজ চলছে এমন খবরের ভিত্তিতে উৎসাহী পুলিশ হবু আসামি সাংবাদিককে গ্রেফতার করে লকাপে রেখেছেন। কি নিয়তি! আজকাল সাংবাদিকের শক্র সাংবাদিক! এক কাথার তলে ঘুমিয়েও যদি সুযোগ মেলে কোন সাংবাদিককে ফাঁসনোর। সেই চেষ্টাটুকু আমরা হাতছাড়া করতে পারি? দেশে প্রতিনিয়ত সাংবাদিকরা নির্যাতিত হচ্ছেই। মামলা-হামলা ও হয়রানীর শিকার হয়েই চলছে। এ থেকে পরিত্রানের উপায় কি! গত কয়েকদিনের মাথায় কক্সবাজারের মহেশখালি প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক ছালামত উল্লাহ পৌর মেয়র ও তার লোকজন কর্তৃক নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হলো। রক্তাক্ত জখম। পা দুটি ভেঙ্গে দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গা হাতুড়ি পেটায় থেতলে দেয়া হয়। কী অপরাধ ছিল সাংবাদিক ছালামত উল্লাহর। প্রশ্ন রাষ্ট্রের কাছে।
অতি সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ চলাকালে ধরে নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা লালমনিরহাট বিএমএসএফ সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক মানবকন্ঠ জেলা প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান সাজুকে নির্মম নির্যাতন করে ক্যামেরা ভাংচুর চালায় । এ ঘটনায় সাজু থানায় একটি মামলা দায়ের করলেও আদালতে গিয়ে দাড়াতে না দাড়াতেই জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে চলে আসল। আমরা কি দেখতে পাচ্ছি। সরকারী অফিসের একজন পিওন-চাপড়াশিকে মারধর করা হলে সরকারি কাজে বাঁধাদানের অভিযোগে মামলা হয়।
আর এ মামলায় সহজেই কারো রেহাই মেলেনা। পক্ষান্তরে যে কোন পাবলিক কিংবা সরকারি দপ্তরের ব্যক্তিরা একজন সাংবাদিককে ঘায়েল করতে একখান চাঁদাবাজি মামলা ঠুকে দিলেই যেন শেষ! পুলিশ ওই আসামি সাংবাদিকের বাড়িতে প্রয়োজনে চৌকি বসিয়ে প্রয়োজনে ধরে ছাড়বে। গত ২৪ এপ্রিল গাজীপুরের শ্রীপুরে বিএমএসএফ ঢাকা জেলার তৎকালীন সহ-সভাপতি মাইটিভির প্রতিনিধি এস এম সোহেল ফকিরের ওপর সন্ত্রাসি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়। মামলা হলেও আসামিরা হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে সাংবাদিক সোহেলকে। প্রতিনিয়ত দলীয় ক্যাডার-সন্ত্রাসি দ্বারা হুমকি-ধামকি ও মামলায় আক্রান্ত হতে হচ্ছে সাংবাদিকদের।
অতি সম্প্রতি ঝালকাঠি জেলা বিএমএসএফ’র সহ-সভাপতি ও মোহনা টিভির প্রতিনিধি রুহুল আমিন রুবেল ও ভোরের সময় প্রতিনিধি বশির আহমেদ স্কুলে অনিয়মিত এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে একটি মিথ্যা চাঁদাদাবির অভিযোগ থানায় মামলা দায়ের করেন ওই শিক্ষক। এ ঘটনায় ওই দুই সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব ছেড়ে পুলিশি গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
গতবছর সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের ক্যাডার বাহিনী দৈনিক যুগান্তরের স্টাফ রিপোটার হাবিব সারওয়ার আজাদকে ৩৪৫ পিস ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল। বিএমএসএফ’র কেন্দ্রীয় কমিটির ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটামের মুখে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল পুলিশ। আমরা প্রশ্ন রেখেছিলাম ওই ৩৪৫ পিস ইয়াবার মালিক কে ছিল পুলিশ নাকি ওই ক্যাডাররা। আজ অবধি ওই ৩৪৫পিস ইয়াবার ঘটনায় পুলিশ কি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তা আমরা জানতে পারিনি। এছাড়া নবাবগঞ্জের ওসির দূর্নীতি-অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় এক যুবলীগ ক্যাডার পুলিশের পক্ষ হয়ে ৫ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষনিক কেরানীগঞ্জের যুগান্তর প্রতিনিধি আবু জাফরকে গ্রেফতার করে। এছাড়া চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দূর্ণীতি-অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় যুগান্তরের প্রতিনিধি মোহাম্মদ সেলিমকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কক্সবাজারের চকরিয়ায় পাহাড়কাটা সন্ত্রাসিদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় হামলার শিকার হয়েছিল এক সাংবাদিক। একই সময়ে কক্সবাজারের উখিয়ায় তিন বিদেশী সাংবাদিককেও মারধরে আহত করা হয়েছিল।
গত ৩ জানুয়ারি খুলনা-১ দাকোপ-বটিয়াঘটা আসনের নির্বাচনী ফলাফল বিভ্রান্তির অভিযোগে ২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল উপজেলা প্রশাসন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মামলায় বাংলা ট্রিবিউন প্রতিনিধি হেদায়েত হোসেন মোল্লা ও মানবজমিন ষ্টাফ রিপোর্টার রাশেদুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছিল। রিটানিং অফিসারের ঘোষণা অনুযায়ী সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করায় তাকে ফাঁসানো হয়েছিল। এভাবে চলছে সাংবাদিক নিপিড়ন-নির্যাতন। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে একটি যুগোপযোগি আইন প্রণয়ন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সত্যিকারের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে প্রয়োজন দূর্ণীতি-অনিয়ম ও সন্ত্রাসমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়া। আর এ জন্য প্রয়োজন অনিয়ম-দূর্ণীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা। সাংবাদিকদের কলম স্তব্ধ করতে চলছে একের পর এক নতুন নতুন আইন প্রণয়ন।
সরকারের আমলারা সাংবাদিক সমাজকে কোনঠাসা করতে যা কিছু প্রয়োজন তা কেবল করেই যাচ্ছেন। এদেরকে ঠেকানো প্রয়োজন। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলে অনুমতি নিয়ে করতে ও গ্রেফতারেও অনুমতি লাগবে এ সংক্রান্ত আইন গত বছর পাস করা হয়েছে। জাতির জনকের সত্যিকারের সোনারবাংলা গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের আবেদন সাংবাদিক নির্যাতনমুক্ত একটি আগামির বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হলে আপনার কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ হবে। এজন্য বিএমএসএফ ঘোষিত ১৪ দফা দাবির বাস্তবায়নসহ জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহের (১-৭মে) রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চায় এদেশের সাংবাদিকরা।