
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসের এক ক্ষেত্র সহকারীসহ তিন জনের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সময়ে জাটকা ধরার অনুমতি দেওয়ার নামে স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে জেলেদের কাছ থেকে বোর্ড প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে তারা মৌখিকভাবে মাছ ধরতে অনুমতি দিচ্ছেন।
অভিযুক্তরা হলেন উপজেলা মৎস অফিসের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প ক্ষেত্র সহকারী ওমর সানি, বোর্ড ড্রাইভার শাহজালাল,ফিস গার্ড কবির বেপারি ও সেকান্দর সরকার।
অভিযোগ রয়েছে ভেদরগঞ্জ উপজেলায় পদ্মা ও মেঘনা নদীতে অবাধে নিষিদ্ধ জাটকা মাছ শিকারে সহযোগিতা করছেন উপজেলা মৎস অফিসের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প ক্ষেত্র সহকারী ওমর সানি, বোর্ড ড্রাইভার শাহজালাল, ফিস গার্ড কবির বেপারি ও সেকান্দর সরকার। তারা নৌকা প্রতি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে কিছু জেলেকে মাছ ধরার অনুমতি দিচ্ছেন। যদিও এ সময়ে মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। উপজেলার প্রায় ১৫ টি পয়েন্টে নিয়মিত প্রকাশ্যে কারেন্ট জাল দিয়ে অবাধে জাটকা ইলিশ ধরছেন। এসব জেলেদের বড় একটি অংশ তাদের নৌকা প্রতি টাকা দিয়ে মাছ শিকার করেন। এছাড়াও আড়তদারের একটি অংশ প্রতিনিয়ত তাদের ঘুষ দিয়ে এ অবৈধ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটারে নিচে ইলিশ শিকার, পরিবহন, বিক্রি, বাজার জাতের ওপর সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অথচ এ আইন মানছেন না অসাধু জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ সময়েও দেখা যায় অহরহ মাছ শিকারের দৃশ্য। দিনের আলোয় তুলনামূলক ভাবে কম দেখা গেলেও রাতের আঁধারে থাকে জেলেদের দখলে। সকালে নদীর তীরে সারি সারি নৌকায় ভর্তি মাছ আর এসব মাছ বিক্রি করা হচ্ছে আড়তগুলোতে। সরকারের পক্ষ থেকে এই সময় জেলেদের জন্য ভিজিএফ চাল ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থাও থাকে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা ব্যক্তিগত লাভের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতে উৎসাহ দিচ্ছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা মৎস অফিসের বোর্ড ড্রাইভার শাহজালাল বলেন, আমি উপজেলা মৎস্য অফিসারের সাথে নিয়মিত অভিযানে বোর্ড চালকের কাজ করি। আমি একদিন ক্ষেত্র সহকারী ওমর সানি স্যারকে বললাম স্যার আমার এই বেতনে চলতে পারছি না। সবাই রাতের আঁধারে জাটকা শিকার ও বিক্রি করে আমিও করতে চাই। ওমর সানি স্যার আমাকে বললো তুমি যদি প্রতিরাতে বোর্ড প্রতি দশ হাজার টাকা দিতে পারো তাহলে করো। আমি রাজি হই এবং স্যারকে নিয়মিত দশ হাজার করে টাকা দিয়ে আমি সহ চারটি বোর্ড জাটকা ধরি। আমার তো আর সরকারি চাকরি না আমি মাছ ধরলেই কি আর না ধরলেই কি। আমি সহ সেকান্দর ও কবিরের মাধ্যমে জেলেদের কাছ থেকে টাকা উত্তলন করে স্যারকে পৌঁছে দেই। আপনি ওমর সানি স্যারের সাথে কথা বলেন। আমি এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।
স্থানীয় জেলে মো. আবু কালাম বলেন, “আমরা সরকারি নিয়ম জানি, কিন্তু অফিসের লোকজন বলেছে কিছু টাকা দিলে সমস্যা হবে না। আমরা গরিব মানুষ, সংসার চালাতে মাছ ধরতে হয়। যদি অফিস থেকেই বলা হয়, তখন আমরা করবো না কেন? আমি প্রতিদিন সেকান্দর ও কবিরকে নৌকা প্রতি ২ হাজার টাকা দেই। মৎস্য অফিসের কবির ভাই ও ওমর সানি স্যার এসে আমাদের বলে গেছে আমরা যদি নিয়মিত টাকা দেই তাহলে অভিযানে আমাদের ধরবে না।
সেলিম নামে আরও এক জেলে বলেন, “গত সপ্তাহে আমাকে বলা হয়েছে যে নৌকা প্রতি ৪ হাজার টাকা দিলে মাছ ধরার অনুমতি পাওয়া যাবে। আমি দুই হাজার টাকা দিয়েছি এইজন্য মৎস অফিসের সেকান্দর আমাকে বলছে তুই আর মাছ ধরতে জাবি না। ওমর সানি স্যার তোকে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করছে। তাই আমি ভয়ে এখন আর নদীতে যা-ই না। জাটকা মাছ রক্ষার দায়িত্ব যাঁদের হাতে তাড়াই দুর্নীতিতে জড়িত আপনি বড় ইলিশ কই পাবেন। আমাদের ধরার আগে তাদের ধরুন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের ক্ষেত্র সহকারী ওমর সানি বলেন, “এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি কখনো কারও কাছ থেকে ঘুষ নিইনি। আমার সাথে জেলেদের যোগাযোগ নেই। তবে অভিযুক্ত ফিস গার্ড কবির ও সেকান্দরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যায় এবং ক্ষেত্র সহকারী ওমর সানি’র সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন,”লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জাটকা রক্ষা আমাদের অগ্রাধিকার। আমার অফিসের কেউ জড়িত থাকলে ছাড় নয়। আমরা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযানে বিপুল পরিমাণ জাটকা জব্দ করোছি”।
স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‘নদী রক্ষা আন্দোলন’ সংগঠন গুলো বলছেন, “এভাবে জাটকা নিধন চলতে থাকলে সামনের বছর ইলিশের পরিমাণ কমে যাবে। যদি সর্ষের মধ্যেই ভূত থাকে তাহলে আপনি কিভাবে এগুলো বাস্তবায়ন করবেন। তাই আমাদের উচিত আগে কর্মকর্তা, কর্মচারীদের দুর্নীতি মুক্ত রাখা। উর্ধতন কর্মকর্তাদের উচিত দ্রুত হস্তক্ষেপ করা।”