
মাদারীপুরের শিবচরের চান্দেরচর হাট জামে মসজিদের দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে উমেদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ আব্দুল লতিফ মুন্সির বিচারের দাবিতে মুসল্লিদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের চান্দেরচর বাজার জামে মসজিদের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
ঘটনার সূত্রে জানা যায়, মসজিদের পাকা ভবন নির্মাণের শুরু থেকে গত প্রায় ১২ বছর ধরে লতিফ মুন্সি সভাপতি এবং মজিদ মৃধা সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। লতিফ মুন্সির বিরুদ্ধে মসজিদের ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, কারণ দোতলা ভবনের নির্মাণকাজের ঠিকাদার ছিলেন তিনি নিজেই। সে সময় মাদারীপুর জেলা পরিষদ থেকে ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। লতিফ মুন্সি দাবি করেন, এই বাজেটে কাজ সম্পন্ন সম্ভব নয়। তখন তৎকালীন সংসদ সদস্য লিটন চৌধুরীর নির্দেশে মসজিদের নিচতলার ২২টি দোকান বিক্রি করে বাকি অর্থ সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ৫ থেকে ৯ লাখ টাকা মূল্যে ১৬টি দোকান বিক্রি করেন লতিফ মুন্সি, কিন্তু মুসল্লিদের মতে, ১২/১৩ বছর আগে এমন স্থাপনা নির্মাণে ৬০ লাখ টাকার বেশি লাগার কথা নয়। অথচ লতিফ মুন্সি প্রায় ২ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন এবং আজ অবধি কারও কাছে এর হিসাব দেননি। ৫ই আগস্টের আগ পর্যন্ত কেউ হিসাব চাইলে তিনি এমপির ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে ভয়ভীতি দেখাতেন। আওয়ামী লীগের পতনের পরও নানা টালবাহানায় সময়ক্ষেপণ করে যাচ্ছেন।
এছাড়া চান্দেরচর হাট থেকে প্রতিবছর ৫-৬ লাখ টাকা মসজিদ কমিটিকে অনুদান দেওয়া হলেও গত ১২ বছরে সেই অর্থ মসজিদের ফান্ডে জমা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। দোকান বিক্রির কোনো চুক্তিপত্র কাউকে দেননি লতিফ মুন্সি, ফলে দোকান মালিকরা যে কোনো সময় উচ্ছেদের আশঙ্কায় আছেন। এমনকি লতিফ মুন্সি ও তার ভাই নিজেরা চারটি দোকান দখলে রেখেছেন বছরের পর বছর।
মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে চাইলে কমিটির সেক্রেটারি মজিদ মৃধা বলেন, “আমার কাছে কোনো হিসাব নেই, সব খরচ লতিফ মুন্সি করেছেন এবং হিসাব তার কাছেই আছে।” কিন্তু লতিফ মুন্সির কাছে গেলে তিনি বিষয়টি উল্টোভাবে উপস্থাপন করেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে, তারা উভয়েই এই অনিয়মে জড়িত।
এ বিষয়ে উমেদপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জামান মুন্সি বলেন, “লতিফ মুন্সি আজ পর্যন্ত কাউকে কোনো হিসাব দেয়নি। তার অনিয়মের শেষ নেই। তিনি বছরের পর বছর হাটের ইজারা নিয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছেন। এমনকি সরকারি শিক্ষকতা করা তার স্ত্রী রেহানা পারভীনের নামেও হাটের ইজারা নিয়েছেন, যা সরকারি চাকরির বিধিবিধান পরিপন্থী।”
মসজিদের মুসল্লি ও এলাকাবাসীরা বলেন, “আমরা আমাদের মসজিদের সকল আয়-ব্যয়ের হিসাব চাই। একজন দুর্নীতিবাজকে আমরা মসজিদের প্রধান হিসেবে দেখতে চাই না।” তাঁরা এই বিষয়ের সুষ্ঠু সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।