Wednesday 14th May 2025
Wednesday 14th May 2025

ভেদরগঞ্জে নারী কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার, স্থানীয় কৃষকদের ক্ষোভ

ভেদরগঞ্জে নারী কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার, স্থানীয় কৃষকদের ক্ষোভ
ভেদরগঞ্জে নারী কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার, স্থানীয় কৃষকদের ক্ষোভ

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকদের দাবি সংবাদে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে অসত্য এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে একজন সৎ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সুনাম ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অভিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে সার ও বীজ সরবরাহ, কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ সব ধরনের সহযোগিতায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। গত ১২ মে একটি গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালে যোগদান করার পরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফাতিমা ইসলামকে অফিসের পাশের একটি কোয়ার্টার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর থেকে বৃদ্ধ মা ও সন্তান নিয়ে সেখানেই বসবাস শুরু করেন তিনি। কিছুদিন পরে হটাৎ পলেস্তারা সহ বৈদ্যুতিক পাখা খুলে পড়ে যায়। পাশাপাশি ২০২৩ সালে ভূমিকম্পে ওই বিল্ডিংয়ের একটি দেয়ালও খসে পড়ে যায়। বিষয়টি উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানালে বিল্ডিংটি জরাজীর্ণ হওয়ায় সেটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। পরে সিনিয়রদের মৌলিক অনুমতি নিয়ে নিরাপত্তা ও বাসা খুঁজে না পাওয়ার কারণে উপজেলার কৃষি অফিসারের কার্যালয় ও কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৩ তলায় একটি কক্ষে বৃদ্ধ মা ও দুই সন্তান নিয়ে সেখানেই বসবাস শুরু করেন তিনি । অফিসের ৩ তলায় বসবাস নিয়ে একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হলে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় কৃষক রহিম মোল্লা বলেন, “আমরা যারা মাঠে কাজ করি, তারা জানি উনি (কৃষি কর্মকর্তা) কেমন। কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম আমরা দেখিনি। অথচ এখন দেখছি উনাকে নিয়ে মিথ্যা খবর ছাপানো হয়েছে।”

অপর এক কৃষক আবুল হালদার বলেন, “এই রকম সৎ অফিসার তো সচরাচর পাওয়া যায় না। সংবাদে যা এসেছে তা আমাদের অভিজ্ঞতার সাথে মেলে না। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সে একজন নারী তাই তার নিরাপত্তার কারণে সে সেখানে থাকতেই পারে। আপনি পারলে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতি খুঁজে বের করুন। একজনের থাকার জায়গা নিয়ে আপনাকে কথা বলার অধিকার কে দিয়েছে ।”

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক ইউপি সদস্য বলেন, “মিডিয়াকে দায়িত্বশীল হতে হবে। কারো ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য এই ধরনের মিথ্যা প্রচার সমাজের জন্য ক্ষতিকর। একজন নাড়ী কর্মকর্তাকে নিয়ে এখানে সংবাদ মাধ্যমে অপপ্রচার মানা যায় না।”

এদিকে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফাতিমা ইসলাম বলেন, আমি ২০২০ সালে এই উপজেলায় যোগদানের পরে আমাকে থাকার জন্য পাশের একটি কোয়ার্টার বরাদ্দ দেওয়া হয়। আমি বাসায় উঠার পরেই দেখি বিল্ডিংটি একেবারে জরাজীর্ণ। ২০২৩ সালে দুইবার হটাৎ পলেস্তারা সহ বৈদ্যুতিক পাখা খুলে পড়ে যায়। এবং ভূমিকম্পে দেয়ালের একটি অংশ খসে পড়ে। বিষয়টি আমি স্যারদের জানানোর পরে ওই বিল্ডিং পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। আমি যেহেতু লেডি অফিসার তাই ঠিকঠাক বাসা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বাচ্চাদের নিরাপত্তা ও বৃদ্ধ মা রয়েছে বাসায় তাই সিনিয়র স্যারদের মৌখিক অনুমতি নিয়ে আমার অফিসের তৃতীয় তলায় একটি কক্ষে বসবাস শুরু করি। এনিয়ে একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হয়। বিষয় আমি দেশবাসীর কাছে বিচার দিলাম। এবং সংবাদে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং বিভ্রান্তিকর। এই বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে আজ সকালে স্থানীয় কৃষকদের পক্ষ থেকে একটি বিক্ষোভ সমাবেশে করা হয়। বক্তারা সেখানে বলেন, এমন একজন নিষ্ঠাবান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। স্থানীয় কৃষক সমাজ একত্রিত হয়ে শিগগিরই প্রতিবাদ জানিয়ে লিখিতভাবে জেলা প্রশাসকের বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের পরিকল্পনা করছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে এবং কৃষকরা চাচ্ছেন—সত্য উদঘাটন করে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।