Saturday 19th April 2025
Saturday 19th April 2025

শরীয়তপুরে নৌপুলিশের বিরুদ্ধে ৮ লাখ টাকার মাছ লুটের অভিযোগ

শরীয়তপুরে নৌপুলিশের বিরুদ্ধে ৮ লাখ টাকার মাছ লুটের অভিযোগ
শরীয়তপুরে নৌপুলিশের বিরুদ্ধে ৮ লাখ টাকার মাছ লুটের অভিযোগ

শরীয়তপুরে নদীপথে মাছ নিয়ে যাওয়ার সময় নৌপুলিশের ইনচার্জ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক মাছ লুটের অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনাটি গতকাল ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার ভোরে গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর লঞ্চঘাট এলাকায় ঘটে।

স্থানীয় মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার কোদালপুর থেকে ৮শ’ কেজি মাছ নিয়ে ট্রলার যোগে আড়তের দিকে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা।

এসময় কিছুদূর এগিয়ে আসলে একটি স্পিডবোটে করে সেখানে আসেন নরসিংহপুর ফাঁড়ীর ইনচার্জ সহ পাঁচ পুলিশ সদস্য।

এরপর ব্যবসায়ীদের ট্রলার থামিয়ে মাছগুলো তাদের বোটে তুলে নিয়ে চলে যায় পুলিশ সদস্যরা।

জোরপূর্বক মাছ নেওয়ার কারণ জানতে স্থানীয় সাবেক দুই ইউপি সদস্য সহ একজন এগিয়ে আসলে তাদেরকে মারধর করে হাতকড়া পরিয়ে ধরে নিয়ে যায় নৌপুলিশের ইনচার্জ।

ট্রলারটিতে বড় ইলিশ, চিংড়ি, পোয়া মাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় আট লাখ টাকার মাছ রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের দাবি বৈধ উপায়ে মাছ নিয়ে যাওয়ার সময় কোনো রকম নোটিশ বা বৈধ কারণ ছাড়াই পুলিশ সদস্যরা তাদের মাছ কেড়ে নিয়ে যান। তাছাড়া আটক করে নিয়ে যাওয়া তিনজনকে জাটকা বিক্রির সাথে জাড়িত দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন নৌ-পুলিশ।

ভুক্তভোগী কোদালপুর আড়তের ব্যবসায়ী রুহুল আমীন বলেন, “আমার কর্মচারীরা মাছ নিয়ে আড়তে যাচ্ছিল। এসময় তাদের দিকে একটি স্পিডবোট এগিয়ে আসতে দেখে ডাকাত ভেবে ভয়ে নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে। পরে বোটটি সামনে আসলে পুলিশের পোশাক দেখে শ্রমিকরা ট্রলারে গেলে তাদের হুমকি দিয়ে পুলিশ মাছগুলো ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাদের ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা মাছ নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সাবেক দুই ইউপি সদস্য সহ তিনজনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।

আমার প্রায় ৮ লাখ টাকার মাছ লুট করেছে পুলিশ। আমি তদন্ত পূর্বক পুলিশের বিচার দাবি করছি।

একই ধরনের অভিযোগ করেছেন আরও কয়েকজন জেলে। তাদের দাবি, নৌপুলিশ মাঝেমধ্যেই এমনভাবে অভিযান চালায় এবং মাছ নিয়ে যায়, যার কোনো প্রকার লিখিত প্রমাণ বা সরকারি কার্যক্রম নেই। তারা বলেন, “প্রতিবারই বলা হয়, ‘উপরের নির্দেশ’। কিন্তু মাছ কোথায় যায়, সেটা কেউ জানে না।” তারা আরও বলেন, “জেলেরা সারাদিন নদীতে পরিশ্রম করে। সেই মাছ যদি পুলিশ লুট করে নেয়, তাহলে মানুষ বাঁচবে কীভাবে? এটা নজিরবিহীন অন্যায়।“আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার হোক।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত নরসিংহপুর নৌ-পুলিশ ইনচার্জ ইয়াছিনুল হক বলেন, “আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি, যেখানে অবৈধ জাল, মাছ বা অনুমোদনহীন কার্যক্রম পেলে তা জব্দ করা হয়। ঘটনার দিন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি বিপুল পরিমাণ জাটকা নিয়ে একদল অসাধু ব্যবসায়ী বিক্রির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। আমি সাথে সাথেই আমার ফোর্স নিয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে ৩’শ কেজি নিষিদ্ধ জাটকা সহ তিনজনকে আটক করে নিয়ে আসি। তাদের ছাড়িয়ে নিতে আমাদের ওপর ডাকাত বলে একদল উশৃংখল মানুষ হামলা করার চেষ্টা করে। আমরা মাছ এবং আসামি নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফাঁড়ীতে চলে আসি। মাছগুলো বিভিন্ন এতিমখানায় বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আসামিদের আদালতের সোপর্দ করা হয়েছে। কেউ যদি আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, তবে সেটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এ ব্যাপারে জানতে নৌ-পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।