
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সোমবার ১টি ড্রেজার পদ্মার ভাঙ্গন এলাকায় পৌছালেও গত ৬ দিনেও ড্রেজার দ্বারা কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
৬ দিনেও ড্রেজার দ্বারা কার্যক্রম শুরু না করার প্রশ্নের জবাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী একেএম ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নির্ধারিত স্থানে ড্রেজার চলুকারার কার্যক্রম চলাছে। হঠাৎ নদীর পানির উচ্চতা ও শ্রোত বেড়ে যাওয়ার কারনে নির্ধারিত স্থানে ড্রেজার সেট করতে বিলম্ব হচ্ছে। পাশাপশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ ব্যবস্থাপনায় জিও ব্যাগ দ্বারা ভাঙ্গন নিয়ন্ত্র করা হচ্ছে।
চোখের পানি ফেলা আর আল্লাহকে স্মরণ করা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। এখন সামনে শুধুই অনিশ্চয়তা। কোথায় গিয়ে দাঁড়াব, কি পেশায় যুক্ত হব কিছুই জানি না। কথাগুলো রিমন হোসেন দেওয়ানের। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মুলফৎগঞ্জ বাজারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ভিলেজ ফার্মেসী নামে একটি ঔষধের দোকান ছিল চর জুজিরা গ্রামের বাসিন্দা রিমন হোসেন দেওয়ানের। ভাঙনে রিমনের দোকান, বসত বাড়ি ও কৃষি জমি বিলীন হয়ে গেছে। রিমন হোসেন বলেন, বেঁচে থাকার সব অবলম্ভন চোখের সামনে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় কয়েক জনার সাথে কথা বলে জানা যায়, গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর, কেদারপুর ঘরিসার ইউনিয়ন ও নড়িয়া পৌরসভা এলাকায় পদ্মার ভাঙন চলছে। ভাঙনে ওয়াপদা, বাঁশতলা, সাধুর বাজার বিলীন হয়ে গেছে। বাজার তিনটিতে ১’শ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। এছাড়া মূলফৎগঞ্জ বাজারের ২৫০ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে।
কেদারপুর দাসপারা গ্রামের বাসিন্দা ছোটন হোসেন ঢালী (৩৬)। মুলফৎগঞ্জ বাজারে মটর সাইকেলের যন্ত্রাংশ বিক্রি ও মেরামতের দোকান ছিল। পদ্মার ভাঙনে বসত বাড়ি ও দোকান বিলীন হয়ে গেছে। কর্মহীন হয়ে পরেছেন ছোটন। নিস্ব ছোটন এক দিকে ছুটছেন আশ্রয়ের সন্ধানে অপর দিকে অর্থ সংকটে দিশেহারা অবস্থা। ছোটনের মতো এমন অবস্থা রয়েছে নড়িয়ার ৪’শ জন ব্যবাসীর। এছাড়া ভাঙনে পাঁচ হাজার ৮১ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ওই সব পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
ছোটন ঢালী বলেন, আমার পরিবারের ৯ সদস্য। দোকানের আয়ে পরিবারের সদস্যদের খাদ্য, চিকিৎসা, পড়ালেখা সব ব্যবস্থা হত। এখন মাথা গোজার ঠাঁই নেই, দোকানের আয় নেই। দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছি। পরিবারের সদস্যদের মুখের দিকে তাকাতে পারিনা। আমাদের ভাগ্যে কি আছে আল্লাহ্ জানেন।
সাধুর বাজার লঞ্চঘাটে মুদি দোকান চালাতেন উত্তর কেদারপুর গ্রামের মহাদেব দাস। ভাঙনে দোকানের সাথে সাথে বসত বাড়িও বিলীন হয়েছে। আশ্রয় নিয়েছেন গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। নদীর পাড়ে একটি স্থানে ভ্রম্যমান চায়ের দোকান খুলেছেন তিনি। মহাদেব দাস বলেন, দোকানের আয় দিয়ে ভাল ভাবে স্বাছন্দে জীবন কাটাচ্ছিলাম। নদী আমার মাথা গোজার ঠাই ও জীবনের সকল আনন্দ কেরে নিয়েছে। অসহায় অবস্থায় মানুষের কাছে হাত পাততে ভাল লাগে না। তাই অস্থায়ী চায়ের দোকান চালু করেছি।
কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মূলফৎগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন দেওয়ান ছিলেন একজন কোটিপতি। সম্প্রতি ভাঙনে তার বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সব হারিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব। এমনকি তার থাকার জায়গাটুকুও নেই। আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়র বাড়িতে।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াছমিন বলেন, ভাঙনের কারণে মানুষ সব হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ছেন। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ কর্মহীন হচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে।