বৃহস্পতিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং, ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৩ই রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরী
বৃহস্পতিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং
স্বপ্নপূরণে উচ্ছ্বসিত শরীয়তপুরবাসী

জাজিরা-মাওয়া প্রান্ত সংযোগ ঘটিয়ে পুরো দৃশ্যমান পদ্মাসেতু

জাজিরা-মাওয়া প্রান্ত সংযোগ ঘটিয়ে পুরো দৃশ্যমান পদ্মাসেতু

একটু একটু করে স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে আরো একধাপ এগিয়ে গেল স্বপ্নের পদ্মাসেতু। বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে পদ্মা সেতুর সর্বশেষ ৪১ নম্বর স্প্যান মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১২ ও ১৩ খুটিতে বসানোর কাজ শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয়েছে পুরো পদ্মাসেতু। সংযোগ হয়েছে জাজিরা-মাওয়া প্রান্ত। এর মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করলো বাংলাদেশ। শুরু থেকেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে অবহেলিত শরীয়তপুরবাসীর মধ্যে আনন্দ উচ্ছ্বাস একটু বেশিই লক্ষ্য করা গেছে। এখন পুরো পদ্মাসেতু দৃশ্যমান হওয়ায় উচ্ছ্বাসটা আরো বেড়ে গেল। স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় শরীয়তপুরবাসী বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

সর্বপ্রথম পদ্মাসেতু নির্মানের দাবি তুলেছিলেন শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার। তিনি পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে সেতুর জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন।

সকল জল্পনা কল্পনার অনসান ঘটিয়ে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সরকার যখন আনুষ্ঠানিক ভাবে শরীয়তপুরের জাজিরা ও মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মাসেতু নির্মানের ঘোষনা দেন তখন সাথে সাথে আনন্দে ফেটে পড়েছিল শরীয়তপুরের মানুষ। শরীয়তপুরবাসী শহরের অলিতে গলিতে আনন্দ মিছিল করে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে গেয়ে রং ছিটিয়ে দিনটিকে উদযাপন ও স্বরণীর করে রাখেন।

শরীয়তপুরবাসী পদ্মাসেতুর জন্য তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটি হারিয়েছে এতে তাদের কোন দুঃখ নেই। তবে শরীয়তপুরের সাথে পদ্মাসেতুর একমাত্র সংযোগ সড়কটি পূরনো মান্দাতা আমলের হওয়ায় এবং সড়কটি উন্নয়নে এখনও কাজ শুরু না হওয়ায় শরীয়তপুরবাসী কিছুটা হতাশ।

পদ্মাসেতুর নাওডোবা এলাকার মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী বলেন, পদ্মাসেতুর জন্য আমরা পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি হারিয়েছি এতে কোন দুঃখ নাই। আমরা শুধু পদ্মাসেতু চেয়েছি। ৪১টি স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে আজকে পুরো পদ্মাসেতু দৃশ্যমান হয়েছে। এতে আমরা আরো বেশি আনন্দিত এবং গর্বিত। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

নাওডোবার জসিম জমাদ্দার বলেন, পদ্মা সেতু নির্মানের ফলে এই এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। জমির দাম বহুগুন বেড়ে গেছে। ভবিষ্যতে এখানে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও পর্যটন স্পট গড়ে উঠবে। বিভিন্ন পার্টি এখানে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রস্তাব নিয়ে আসছেন। ভবিষ্যতে এখানকার মানুষের জীবনমানে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে বলে আমি আশা করি। পুরো পদ্মাসেতু দৃশ্যমান হওয়ায় আমরা আনন্দিত।

শরীয়তপুর জেলা সদরের হাবিবুর রহমান ঢালী বলেন, পদ্মাসেতু আমাদের কাছে এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব। ৪১ টি স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে পুরো পদ্মাসেতু দৃশ্যমান হয়েছে। এতে আমরা আনন্দিত। পদ্মাসেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হতে আর বেশিদিন বাকি নেই। কিন্তু শরীয়তপুর জেলার মানুষ যে সড়কটি দিয়ে পদ্মা সেতুতে উঠবে সেই সড়কটির বেহাল অবস্থা। সড়কটি উন্নয়নে এখনো কাজ শুরু না হওয়ায় শরীয়তপুরবাসী কিছুটা হতাশ। আমরা পদ্মাসেতুর সংযোগ সড়কটি উন্নয়নে দ্রুত কাজ শুরুর দাবি জানাই।

পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি ও শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার বলেন, আমিই সর্বপ্রথম পদ্মাসেতু নির্মানের দাবি তুলেছিলাম এবং আন্দোলন করেছিলাম। তখন মানুষ আমাকে পাগল বলেছে। পদ্মাসেতু করা নাকি অসম্ভব। আজকে আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে পুরো পদ্মাসেতু। এজন্য আমি আনন্দিত এবং গর্বিত। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে জাজিরা-মাওয়া পয়েন্টে পদ্মাসেতু নির্মান হয়েছে। এজন্য শরীয়তপুরবাসী প্রধানমন্ত্রী জননপত্রী শেখ হাসিনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূইয়া রেদওয়ানুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর সুফল যাতে শরীয়তপুরবাসী পান সেজন্য এই সেতুর সঙ্গে বিদ্যমান সড়কের সংযোগ তৈরি এবং সড়কটির উন্নয়নে এক হাজার ৬৮২ কোটি ৫৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া ‘শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা ব্রিজ অ্যাপ্রোচ) সড়ক উন্নয়ন’ শীর্ষক এই প্রকল্প ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। অল্পকিছুদিনের মধ্যেই সড়কটির চার লেনের জন্য জমি অধিগ্রহন শুরু হবে। এরপর প্রথমে সড়কটির দুই লেনের কাজ সম্পনৃন করা হবে। পর্যায়ক্রমে সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হবে।


error: Content is protected !!