
সাম্প্রতিককালে মানব পাচার প্রতিরোধে র্যাব-৮, বরিশাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গত ২৮ মে, ২০২০ বৃহস্পতিবার লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলির দক্ষিণ শহর মিজদায় আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্র অভিবাসন প্রত্যাশিদেরকে অপহরণ করে মুক্তিপণ না পাওয়ায় ২৬ জন বাংলাদেশিসহ ৩০ জনকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে এবং ১১ জন বাংলাদেশিকে গুরুতর আহত করে। বিষয়টি র্যাব-৮ এর নজরে আসলে র্যাব-৮ এর অধীনে ১১ টি জেলার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট মানব পাচারকারীদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতঃ দ্রুত গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
লিবিয়ায় মানব পাচারের বিষয়টি নজরে আসার সাথে সাথে র্যাব-৮ নিরলসভাবে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এরই ভিত্তিতে র্যাব-৮ জানতে পারে একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের সদস্য বাংলাদেশ, লিবিয়া ও ইতালিতে অবস্থান করে মোটা অংকের বেতনের চাকুরীসহ বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে মানব পাচার করছে। উঠতি বয়সের অল্প শিক্ষিত নিম্নবিত্ত বেকার যুবকেরাই মূলত তাদের প্রধান টার্গেট। প্রথম ধাপে চক্রটি এই যুকদের লিবিয়া পাঠায়। পরবর্তী ধাপে লিবিয়ায় বন্দীশালায় তাদেরকে জিম্মি করে বন্দীদের পরিবারের কাছে মোটা অংকের টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। দাবীকৃত মুক্তিপণের টাকা না দিলে শিকার হতে হয় অমানুষিক নির্যাতনের। পরবর্তীতে চক্রটি টাকা প্রাপ্তি স্বাপেক্ষে বিভিন্ন মাফিয়া চক্রের মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় নৌকা যোগে ইতালির উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেয়। উক্ত চক্রটি বাংলাদেশে অবস্থানকারী দালালদের মাধ্যমে ক্ষেত্র বিশেষে দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মুক্তিপণ আদায় করে বলে র্যাব-৮ জানতে পারে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৮ এর একটি চৌকষ দল তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ২৯ জুন সোমবার রাত সাড়ে ১১ টায় মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানাধীন নূরপূর গ্রাম এলাকা হতে রবিউল মিয়া @ রবি(৪০), পিতাঃ রতন মিয়া, সাং-নূরপূর, থানাঃ রাজৈর, জেলাঃ মাদারীপুরকে আটক করে।
আটককৃত আসামী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সমূহের সত্যতা নিশ্চিত করে এবং সে উক্ত মানব চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করে। ধৃত আসামী বাংলাদেশে অবস্থান করে বিভিন্ন যুবককে টার্গেট করা থেকে শুরু করে তাদের পরিবারকে প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহের কাজ করে এবং লিবিয়ায় অবস্থানরত তার ছেলে সজীবের সাথে যোগসাজশে অবৈধ পন্থায় লিবিয়ায় বাংলাদেশ হতে মানব পাচার করত। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে ডিএমপি, ঢাকার পল্টন মডেল থানার মামলা নং-০৪, তারিখঃ ০৫/০৬/২০২০ খ্রিঃ, ধারাঃ মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ৭/৮/১০ তৎসহ ৩০২/৩২৬/৩৪ দঃবিঃ এবং ডিএমপি, ঢাকা বনানী থানার মামলা নং-০২, তারিখঃ ০৬/০৬/২০, ধারাঃ মানব পাচার ও প্রতিরোধ দমন আইন, ২০১২ এর ৬/৭/৮/১০ তৎসহ ৩০২/৩২৬/৩৪ আইনে মামলা রেেয়ছে। আটককৃত আসামীকে ডিএমপি, ঢাকার পল্টন মডেল থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সাম্প্রতিককালে মানব পাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপর গভীর নজরদারী রাখা এবং প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে মানব পাচার চক্রের অন্যান্য সক্রিয় সদস্যদের গ্রেফতারে র্যাব-৮ এর অপারেশন তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।