
শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নে অবস্থিত রুদ্রকর নীলমনি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি চারতলা ভবন নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে এগুলোর স্থায়ীত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী বলছে, যেসব সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এবং যে পরিমানে ব্যবহার করা হয়েছে তাতে যে কোন সময় ছাদ ও ওয়াল ভেঙ্গে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনা কবলে পড়তে পারে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এ দায়িত্ব কে নেবে তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী জানায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অর্থায়নে শরীয়তপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি) নির্মাণে নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহের উন্নয়ন প্রকল্পের ২ কোটি ৭৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৫১ টাকা ব্যয়ে রুদ্রকর নীলমনি উচ্চ বিদ্যালয়ের স্যানেটারি, পানি সরবরাহ, বৈদ্যুতিক কাজ ও চারতলা ভিত বিশিষ্ট চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
বিদ্যালয় নির্মাণে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মাদারীপুর জেলার গোলাবাড়ি নতুন জজ কোর্ট এলাকার শহিদ মিয়া সানজিদা ট্রেডার্স।
এলাকাবাসী জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানই কাজে প্রচুর অনিয়ম করে চলেছে। তারা মাটি মেশানো বালি, রাবিস মিশানো খোয়া মরিচা ধরা রড ব্যবহার করছে। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে চারতলা ভবনের প্রথম তলার ছাদ ঢালাই চলছিল এ সময় ওই এলাকার এসকান্দার মৃধা, আবুল কালাম সরদার, সবুজ চৌকিদার, সেলিম সরদার, জসিম চৌকিদারসহ ১৫/২০ জন নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করে। তাদের তোয়াক্কা না করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদার ও জেলা শিক্ষা অধিদফতরের প্রকৌশলীরা।
ওই এলাকার এসকান্দার মৃধা বলেন, আমিও ঠিকাদারি করেছি। কিন্তু এতো নিম্নমানের কাজ আমি কখনই দেখি নাই। মরিচা ধরা রড, মাটি মেশানো বালি, প্রচুর রাবিস মিশানো খোয়া ব্যবহার করছে ঠিকাদার। তাই আমরা এলাকার লোকজন গিয়ে প্রতিবাদ করি। কিন্তু আমাদের কথা ঠিকাদার না শুনে এলাকার কিছু প্রভাবশালী লোকদের যোগসাজসে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া জসিম চৌকিদার ও কামাল হোসেনসহ এলাকার অনেকেই বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে স্কুলের ভবন তৈরি করা হচ্ছে। কয়েকদিন পর বটগাছ ও পরগাছা জন্মাবে ছাদ ও ওয়ালে। নিম্নমানের সামগ্রী দেয়ায় মনে হচ্ছে কয়েক বছর না যেতে ছাদ ভেঙ্গে স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীর ওপর পরবে। ঘটবে দুর্ঘটনা। তাই পুনরায় ভালো রড, বালু, খোয়া ও ইট দিয়ে স্কুলটি বানানো হোক।
নীলমনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঠিকাদার ও প্রকৌশলীরা বললো তাদের ইট, বালু, রড এবং খোয়ার মান নাকি ভালো। আমরাতো এ ব্যাপারে কিছু বুঝি না।
ঠিকাদার শহিদ মিয়া বলেন, বিদ্যালয়ের চারতলা ভবনের একতলা ছাদের ও অন্যান্য কাজ যে বালু, খোয়া, সিমেন্ট ও রড দিয়ে করা হচ্ছে তার মান খুবই ভালো। শিক্ষা প্রকৌশলের প্রকৌশলীরা পরিদর্শণ করে গেছেন।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. এমারত হোসেন মিয়া বলেন, বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। আমি সরেজমিন পরিদর্শণ করবো। ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী বলরম কুমার মন্ডলের অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে ফোন করলেও এ বিষয় কিছু বলতে রাজি নন তিনি।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমা খানম বলেন, বিষয়টি আমি জানি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য অফিসের লোক পাঠানো হয়েছে এবং জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলীকে বিষয়টি দেখার জন্য বলা হয়েছে। বিদ্যালয়ের কাজ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে করা যাবে না। ব্যাপারটি আমি দেখছি।