
পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে স্রোত। স্রোতের কারণে পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত দুদিনে জাজিরার নাওডোবায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের ৭০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছে। আর কুন্ডের চর ইউনিয়নের সিডার চর এলাকায় ভাঙনে ২০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে।
এ ছাড়া শরীয়তপুরের আরও ১৪ টি স্থানে ভাঙন রয়েছে। এসব স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে।
শরীয়তপুর পাউবো সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার আগে ২০১০-১১ সালে জাজিরার নাওডোবা এলাকায় পদ্মা নদীতে ব্যাপক ভাঙন ছিল। ২০১২ সালে সেতু বিভাগ পূর্ব নাওডোবার ওকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি গ্রাম পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকা সিসি ব্লক দিয়ে ভাঙন প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। বাঁধের শেষ প্রান্তে ওকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এলাকা দিয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে ওই এলাকা পদ্মা নদীতে ভাঙছে। গত দুদিনে বাঁধের ৭০ মিটার সিসি ব্লক নদীতে ধসে যায়। এই স্থান দিয়ে তীর উপচে পদ্মার পানি লোকালয়ে ঢুকছে।
কুন্ডের চর ইউনিয়নের একটি মৌজা সিডার চর। এর চারদিক দিয়ে পদ্মা নদী। সিডার চর এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ হয়েছে। দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনে ২০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে করপাড়া গুচ্ছগ্রাম।
এছাড়াও পদ্মা ও কীর্তিনাশা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় শরীয়তপুর জেলার বন্যার পরিস্থিতির অবনতি, নতুন-নতুন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। জেলার ৬টি উপজেলার শরীয়তপুর সদর, নড়িয়া, জাজিরা, ভেদরগঞ্জ, গোসাইরহাট, ড্যামুডা উপজেলার অন্তত ৩৪ টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৪ লাখ মানুষ। চারদিকে পানি থাকায় বন্যা কবলিত এলাকায় সল্প আয়ের শ্রমজীবি দরিদ্র পরিবারের মধ্যে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকটসহ বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যানিটেশনের তীব্র সংকট। জেলায় বন্যার পানি হঠাৎ করে বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৫’শ ৩৪ হে: রোপা আমন ও ১০০ হে: ফসলী জমির শাকসবজি তলিয়ে গেছে, মৎস খামারে তলিয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে চলে গেছে বিল ও নদীতে। বন্যার পানি ঢুকে যাওয়ায় সীমাহীন দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশ্রাফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক ধসে নদীতে বিলীন হচ্ছে। সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভাঙনে গৃহহীন পরিবারগুলোকে সহায়তা করা হবে। তাদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে। পুনর্বাসনে সহায়তাও দেওয়া হবে।
নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় জাজিরার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের জিরো পয়েন্ট, ওকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি, বড় কান্দি ইউনিয়নের দুর্গাহাট, নাজিম উদ্দিন ব্যাপারীকান্দি, নড়িয়ার ঘরিসার ইউনিয়নের চরমোহন, বাংলাবাজার, চরআত্রা ইউনিয়নের বসাকের চর, কীর্তিনাশা নদীর নড়িয়ার মোক্তারের ইউনিয়নের ঢালীপাড়া, সদরের পালং ইউনিয়নের কোটাপাড়া, ডোমসার ইউনিয়নের মুন্সিরহাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হকের নির্দেশে এসব স্থানে ভাঙনরোধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
জাজিরার ওকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি গ্রামের মোবারক চোকদার বলেন, ‘ভাঙনে বসতবাড়ি বিলীন। পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধ দেওয়ায় মনে আশা জেগেছিল আর ভাঙনের শিকার হব না। কিন্তু পদ্মা বাপ-দাদার ভিটা গ্রাস করে নিল।’
সিডার চর এলাকার দবির উদ্দিন বলেন, পদ্মায় তাঁর বসতবাড়ি ও আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। করপাড়া গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন পদ্মার ভাঙন সেটিও গ্রাস করবে। এরপর কোথায় আশ্রয় নেবেন জানেন না।
শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের যে অংশে ভাঙন শুরু হয়েছে, তা থেকে সেতুর দূরত্ব দুই কিলোমিটার। এই মুহূর্তে সেতু প্রকল্প এলাকার কোনো ঝুঁকি নেই। সেখানে ৫০০ মিটার জায়গায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে পাউবো। পদ্মা সেতু প্রকল্পসহ শরীয়তপুরের নানা স্থাপনা ও হাটবাজার রক্ষায় বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী বাঁধ দেওয়ার প্রকল্প নেওয়া হবে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁদের পাশে থাকতে।