
শরীয়তপুর সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজে শারদীর জ্যোৎস্না উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২৮ আগস্ট সোমবার জ্যোৎস্না স্নাত সন্ধ্যায় গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের ছাদ বাগানে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা পরিষদ এর আয়োজনে এই ব্যতিক্রম ধর্মী শারদীর জ্যোৎস্না উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সবাইকে রজনীগন্ধা ফুলের সুভাষে সুভাষিত করেন আমন্ত্রিত অতিথিদের। তারপর অপরাজিতা শিল্পী গোষ্ঠী উদ্বোধনী গান শরৎ বন্ধনা পরিবেশন করেন। একই সাথে চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে” (রবীন্দ্রসংগীত), নৃত্যনুষ্ঠান, কবিতা, একক সংগীত পরিবেশন হয়। পরে আমন্ত্রিত অতিথিগন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শরীয়তপুর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ এর অধ্যাক্ষ মো: হারুন অর রশিদ জ্যোৎস্না স্নাত শুভসন্ধ্যায় সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, প্রফেসর মো: ওয়াজেদ কামাল যখনি সরকারী গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজে অধ্যাক্ষ হিসাবে যোগদান করেছেন।এসেই তিনি ফোনে আমার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। আমিও তার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। এই মানুষটিকে আগে আমি চিনতাম না। তারপর আস্তে আস্তে দেখলাম। এই মানুষটি সাহিত্য, সংস্কৃতি, সামাজিক, প্রশাসনিক অনেক ক্ষেত্রে তার বিচারণ আছে। যদিও তিনি নারায়ণগঞ্জে চাকুরী করেছেন। তবুও দেখলাম শরীয়তপুরের প্রতি তার অন্তর নিংড়ানো ভালোবাসা জড়িত আছে। সেই জন্য তিনি সকল মহলের সাথে সু’সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছে। আজকের দিনের যে অনুষ্ঠান করার ভবনা। এটা আসলেই একটি ব্যতিক্রম ধরণের ভাবনা। এক সপ্তাহ্ আগে আমাকে স্ব’পরিবারে ছাদ বাগনে আমন্ত্রণ করেছিল। এটা যে জ্যোৎস্না মাখা সন্ধ্যা উপভোগ করার জন্য একটি আয়োজন। এটি অবশ্য তিনি আমাকে বলেননি। যাই হোক! ভাল লাগলো তার চিন্তাধারা। আসলেই তো আমরা আমাদের অতীত ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এগুলি ভুলে যাচ্ছি। আসলে তো এগুলো ভোলার নয়। এখন আমাদের অনেক হয়েছে। অনেক পেয়েছি। অনেক খেয়ে পরে,মনে হয়না যে ভাল আছি। সেই যে, ছোট বেলায় ধানের ক্ষেতের, ধানের নারার মধ্যে শুয়ে শুয়ে জ্যোৎস্না দেখতাম। নারার মধ্যে বালিশ একটা মাথার নিচে দিয়ে জ্যোৎস্না রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে ঘুমিয়ে পরতাম। একটু অভাব ছিল। সব কিছু চাইলে পাইতাম না। সেদিনটিই তো ভাল ছিল। সেই দিনটিই তো সুন্দর ছিল। এতো খেয়ে পরে আমাদের যে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তাদেরকে তো এই প্রকৃতি দেখাতেই পারছি না। শেখাতে পারছি না। ঐ যে প্রফেসর মাখছুদা খাতুন বললেন, পরিবারে ১০ জন সদস্য ১০ টি মোবাইল নিয়ে ১০ টি রুমে একা -একা। এটি কোন জীবন নয়। আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তার সৃষ্টিকে দেখার জন্য। তাঁর সৃষ্টিকে দেখেই আমরা তাঁকে উপলব্ধি করতে পারব। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা শিকার করতে পারব। আমরা যে জীবন আচার চর্চা করতেছি। আসলে এটি সত্যিকার জীবন নয়। যা হোক, আমি বলবো। আমরা আমাদের প্রকৃতির কাছে যাই। সৃষ্টির সৃজনশীলতার কাছে যাই। চাঁদের হাসি দেখার জন্য। আমরা একটি জ্যোৎস্না মাখা রাতে সকল আলো নিভিয়ে চাঁদের জ্যোৎস্নাকে উপভোগ করি। চাঁদ নিয়ে আমাদের যত কবিতা-গান সব কিছু আমাদের বাঙ্গালির ঐতিহ্য। আমাদের গর্ব। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখা আমাদের দায়িত্ব। এই ওয়াজেদ কামাল দায়িত্বটি পালন করেছেন। আমাদের সবাই এই জ্যোৎস্না উপভোগ করার জন্য আমন্ত্রণ করেছেন। আমরা সবাই আজ তার প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি আমাদের চোখ মুখ খুলে দিয়েছেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বাধীনতার স্থাপতি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট ঘাতকের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়,তার পরিবারের সদস্যবর্গ নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন। আমরা জাতীর পিতা সহ সেই দিন যারা নিহত হয়েছেন। তাদের আত্মা ও রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। সেই সাথে জাতীর পিতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, নড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যাক্ষ মাকসুদা খাতুন। এসময় অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন, ভোজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন প্রধান শিক্ষাক ভোজেশ্বর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাসুদ আলী দেওয়ান, তুলাসার গুরুদাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরে আলম, পন্ডিতসার টি এম গিয়াসউদ্দিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ শামছুর রহমান, মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যাক্ষ ফরিদ আল হোসাইন, শরীয়তপুর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ এর উপাধ্যক্ষ অলিউর রহমান ফরাজি, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, নড়িয়া সরকারি কলেজের প্রভাষক শামসুল আলম, প্রভাষক কাকলি কুন্ডু, এডভোকেট মির্জা হযরত আলী পিপি জজ কোর্ট, প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাক্ষ সমক, দেলোয়ার হোসেন খান, এডভোকেট বশিরুল আলম, নড়িয়া সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ সাইদুর রহমান ও দৈনিক রুদ্রবার্তা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক শহীদুল ইসলাম পাইলট প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য রাখেন, সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের অধ্যাক্ষ ওয়াজেদ কামাল। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত চলে এই অনুষ্ঠান। নৈশভোজ মধ্যদিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।