
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাশপুরে রাতের আধাঁরে প্রতিপক্ষের বসত বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করার অভিযোগ উঠেছে একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। বর্তমান চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার লোকজন এই লুটতরাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার। পুলিশ জানিয়েছে এলাকায় এখন শান্তি বিরাজ করছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার জাজিরা উপজেরার বিশালপুরে দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান চেয়ারম্যান আবু তাহের সরদার ও সাবেক চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারীর গ্রুপের লোকজনের মধ্যে প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এই নিয়ে এলাকায় হামলা, ভাংচুর ও লুটতরাজ নিত্য দিনের কর্ম। গত বুধবার দিবাগত রাত ৩ টা থেকে বিলাশপুর শফি কাজীর মোড় এলাকার বাদল কাজীর বাড়িতে বর্তমান চেয়ারম্যান আবু তাহের সরদারের লোকজন হামলা চালিয়ে শফি কাজী ও বাদল কাজীর বসত ঘর, গোয়াল ঘর ও রান্নাঘর ভেঙ্গে সরিয়ে ফেলে এবং ঘরে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে। বাঁধা দিলে বাড়িতে থাকা মহিলাদের সাথে খারাপ আচরণ করে হামলাকারীরা। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা নেয় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার। রাত ৪ টা থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত সেখানে পুলিশ অবস্থান করে। পরে পুলিশ চলে গেলে আবারও ভাঙ্গচুর করেন হামলাকারীরা।
এই বিষয়ে বাদল কাজী বলে, বর্তমান চেয়ারম্যান আমাকে তার সাথে দলবল করার জন্য প্রস্তাব করে। কুদ্দুস বেপারী একজন ভদ্র ও শিক্ষিত লোক। এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এতিম খানা করেছে। সমাজের মানুষ তাকে ভালো জানে। আমি কুদ্দুস বেপারীর সাথে দলবল করি তাই ৭ বছরেরও বেশী সময় ধরে বাড়িতে থাকতে পারি না। বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করি। তবুও এই পর্যন্ত আমি ও আমার পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ৩০ টিরও বেশী মামলার আসামী করেছে। অনেক মামলায় শেষ হয়েছে। এখনও ৮-১০টি মামলা চলমান আছে। এবার ঘটনার দিন বর্তমান চেয়ারম্যান আবু তাহের সরদারের সমর্থক কামাল কাজী, হারুন সরদার, জলিল কাজী, আলমগীর কাজী, রুহুল কাজী, হাকিম, শাহ আলম, জলিল মাদবরসহ ২ শতাধিক লোকজন এসে আশপাশের বাড়ি লোকজন জিম্মি করে এই ভাংচুর করে। এই সময় বাড়ির মানুষের সাথে খারাপ আচরণও করে হামরাকারীরা। এই বিষয়ে ৯৯৯ ফোন করে আইনী সহায়তা নিয়েছি। আমি মামলা করব।
শফি কাজীর স্ত্রী মহসীনা বেগম বলেন, চেয়ারম্যান তাহের সরদারের সমর্থক লোকজন এসে রাত ৩টার দিকে হামলা চালায়। বাদল কাজীর ৩টি ও আমাদের ১টি ঘর ভেঙ্গে ফেলেছে। আমরা প্রতিবাদ করায় আমাদের সাথেও খারাপ আচরণ করেছে। তাদের ভয়ে বাড়িতে কোন পুরুষ থাকতে পারে না। একটি আগে পাশের বাড়িতে এসে আমার এক ভাগ্নেকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছে।
এই বিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী বলেন, আমি এলাকায় একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও ১টি এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাকে এলাকার লোকজন ভালো জানে। আমাকে যারা সমর্থন করে তাদের বর্তমান চেয়ারম্যানের লোকজন নির্যাতন করে। তাদের ভয়ে শান্তিপ্রিয় লোকজন এলাকায় থাকতে পারে না। এবার মধ্যযুগীয় কয়দায় রাতের আধাঁরে শফি কাজী ও বাদল কাজীর ঘরবাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছে। আমি চেয়েছিলাম শান্তিপ্রিয় বিলাশপুর। শান্তিপ্রিয় বিলশপুর গঠনে আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এই বিষয়ে জানতে বর্তমান চেয়ারম্যান আবু তাহের সরদারের মুঠোফোনে কলা করা হয়। তিনি অন্য লোক দিয়ে কল রিসিভ করায়। পরে কল রিসিভকারী জানায় চেয়ারম্যান ব্যস্ত আছেন। পড়ে কথা বলবে। তার পরে তিনি আর কল রিসিভ করেনি।
এই বিষয়ে জাজিরা থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আজহারুল ইসলাম সরকার বলেন, সংবাদ পেয়ে সাথে সাথে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। বর্তমানে সেখানে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।