
শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ শিক্ষার্থীকে হেনস্তা ও জীবননাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক যুবদল নেতা ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শরীয়তপুর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ও সেল সম্পাদক মাহবুব আলম জয়।
লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চিকিৎসক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে সেবাদানে ব্যাহত হচ্ছিলো। হাসপাতালটিতে মাত্র ২ জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন। যারা প্রতিদিন ৪০০-৪৫০ জন বহির্বিভাগের রোগী এবং ৭৫-১০০ জন অন্তঃবিভাগের রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে অস্ত্রোপচার কক্ষ (ওটি) থাকা সত্বেও শল্য চিকিৎসক ও অবেদনবিদের অভাবে সাধারণ অস্ত্রোপচারও করা সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি, হাসপাতালের রোগীদের যে ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয় তার পাশেই ময়লা আবর্জনা রাখা হয়। হাসপাতালের এমন অনিয়ম ও দুরবস্থার জানার পর গত ১১ মার্চ হাসপাতালে পর্যবেক্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ও সেল সম্পাদক মাহবুব আলম জয়সহ পাঁচ জন শিক্ষার্থী। পরে হাসপাতালের সমস্যা সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানকে অবহিত করতে গেলে সেখানে স্থানীয় ক্লিনিক ব্যবসায়ী ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক আনোয়ার সরদার, পৌরসভা বিএনপি নেতা শিমুল সরদারসহ ২৫ থেকে ৩০ জন লোক তাদের অবরুদ্ধ করে জীবননাশের হুমকি দেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এসময় তারা ভিডিও ধারন করলে ফোন কেড়ে নেয়ার পাশাপাশি শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে। পরে খবর পেয়ে গোসাইরহাট থানা পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ও সেল সম্পাদক মাহবুব আলম জয় দৈনিক রুদ্রবার্তাকে বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কথা বলতে যাওয়ায় যুবদল নেতা আমাদের লাঞ্চিত করেছে। বিএনপির মতো এতো বড় একটি দলের কাছে এধরণের আচরণ প্রত্যাশা করিনা। আগামীতে হয়তো তারা সরকার গঠন করবে, কিন্তু জনগণের পক্ষে কথা বলায় তারা যদি আমাদের সাথে এমন আচরণ করে সেটা কাম্য নয়। আমরা চাই মানুষের জনসেবায় তারাও যেন এগিয়ে আসে। এই ঘটনায় যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাই।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুরের আহবায়ক ইমরান আল নাজির দৈনিক রুদ্রবার্তাকে বলেন, শরীয়তপুরের হাসপাতালগুলো নানা সমস্যায় জর্জরিত। আমরা হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও বলেছি। গোসাইরহাট হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যহত হচ্ছিলো এমন সংবাদে সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পাঠিয়েছিলাম। তারা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাতে গিয়েছিল। সেখানে সাবেক যুবদল নেতা এবং ক্লিনিক ব্যবসায়ী আনোয়ার সরদার ও তার লোকজন শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছেন, হেনস্তা করেছেন এবং হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আশা করি প্রশাসন দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।
এ ব্যাপারে জেলার পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম দৈনিক রুদ্রবার্তাকে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এবং আমরা তা দেখেছি। আমরা আইনানুগভাবে বিষয়টি দেখবো।