
শরীয়তপুরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমনে পুলিশ ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির সমন্বিত ভূমিকা জোরদার করার লক্ষ্যে মার্চ মাসের পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (০৮ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এজলাসে আয়োজিত এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন শরীয়তপুরের বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবুল বাশার মিঞা।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উদ্যোগে আয়োজিত এই কনফারেন্সে শরীয়তপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির সকল ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন র্যাবের কোম্পানি কমান্ডার (পুলিশ সুপার) মীর মনির হোসেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আল নোমান, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ শরীফউজ্জামান, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান, শরীয়তপুর সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. শাহ আলম সিদ্দিকি, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম কাশেম, সাধারণ সম্পাদক মুহাঃ কামরুল হাসান, বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মনিরুজ্জামান (দিপু) এবং জেল সুপার, শরীয়তপুর। এছাড়া পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নেন।
সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবুল বাশার মিঞা বলেন, “সকল মানুষের আইনের আশ্রয় লাভ ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি ও পুলিশ বিভাগের সমন্বিত এবং কার্যকর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমনে আমাদের প্রতিশ্রুতি অটুট থাকতে হবে।” তিনি এ ধরনের সম্মেলনের মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কার্তিক চন্দ্র ঘোষ মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ আইনি বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তিনি দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮-এর ১৬১ ধারায় জবানবন্দি লিপিবদ্ধকরণ, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের উদ্দেশ্যে আসামি প্রেরণ, প্লি অব এলিবাই, খসড়া মানচিত্র ও সূচিপত্র প্রস্তুতকরণ এবং পরিস্থিতিগত প্রমাণ (Circumstantial Evidence) ও অপরাধের উদ্দেশ্য (Motive) বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ তদন্তে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। তারা তদন্ত প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তিগত ও লজিস্টিক সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ শেয়ার করেন। বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উত্থাপিত সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন এবং পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেসির মধ্যে সমন্বয় আরো জোরদার করার তাগিদ দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন র্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মীর মনির হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আল নোমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ শরীফউজ্জামান, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান, শরীয়তপুর সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. শাহ আলম সিদ্দিকি, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম কাশেম, সাধারণ সম্পাদক মুহাঃ কামরুল হাসান, বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর মনিরুজ্জামান (দিপু) এবং জেল সুপার, শরীয়তপুর। বক্তারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও বিচার প্রক্রিয়া দ্রুততর করার ক্ষেত্রে তাদের নিজ নিজ অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ তুলে ধরেন।
সমাপনী বক্তব্যে বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবুল বাশার মিঞা সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “এই সম্মেলন আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আরো সচেতন করেছে। আমরা সকলে মিলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের ভূমিকা পালন করব বলে আমি আশাবাদী।” এরপর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
শরীয়তপুরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন ও বিচার প্রক্রিয়া জোরদারে এ ধরনের সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এটি পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেসির মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের আস্থা অর্জনেও সহায়ক হবে।