
আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস- বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব প্রকাশের দিন। মহান বিজয় দিবস ২০১৯ উপলক্ষ্যে শরীয়তপুরবাসীকে রক্তিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি। আজকের এই মহান দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মারণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে-যাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি দীর্ঘ তেইশ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতাসহ স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আত্মনিবেদিত ত্রিশ লক্ষ শহীদ, সম্ভ্রমহারা দু’লক্ষ মা-বোন আর যুদ্ধজয়ী সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে- যাঁদের কাছে আমাদের অসীম ঋণ ও কৃতজ্ঞতা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালায়। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। বীর মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় পাকহানাদার এবং তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনেন। জাতি পায় স্বাধীন রাষ্ট্র, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত। ১৯৭১ এ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন।
জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার। এই স্বপ্নই বাংলাদেশের পথ চলার পাথেয়। আজকে বিশ্বে দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া , ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট(এসডিজি) অর্জন, রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্নপূরণ এবং মাটি,পানি ও জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রাধান্য দিয়ে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়ন- এ লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সাফল্য এখন বিশ্বের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের সাফল্য এখন বিশ্বের উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর কাছে রীতিমতো বিস্ময়কর। নিজস্ব অর্থায়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বপ্নের পদ্মা বহুমূখী সেতু নির্মাণসহ ১০টি মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগ অবহেলিত ও অতিদরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান সাফল্য। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মপ্রত্যয়ী নেতৃত্বে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। মহাশূন্যে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে নিজস্ব স্যাটেলাইট।
উন্নয়নের ¯্রােতধারায় কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা, অবকাঠামোসহ আর্থ-সামাজিক সকল খাতে শরীয়তপুর জেলায়ও জীবন-প্রবাহেব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে ‘সোনালী সেতুর শ্যামলভূমি’ শরীয়তপুর হয়ে উঠেছে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় স্থান, উন্মোচিত হবে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার দুয়ার, উন্নত হবে জীবনযাত্রার মান। দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে জাজিরা উপজেলায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পাওয়া গেছে এবং জাজিরা উপজেলায় স্থাপিত হবে ‘শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী’। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের পাশাপাশি জেলায় অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সাধিত হবে।
জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বির্নিমাণে শ্রেণি-দল-মত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। আসুন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরো বেশি অবদান রাখি, দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেই সমৃদ্ধ আগামীর পথে। এটাই হোক ২০১৯ সালের মহান বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
কাজী আবু তাহের
জেলা প্রশাসক, শরীয়তপুর